আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে বিকল্প রাজত্ব তৈরির চেষ্টায় কাল হল ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের জীবনে

নিজস্ব প্রতিবেদক


মূল পত্রিকা পড়তে উপরের ছবিতে ক্লিক করুন

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘরে যে আগুন লেগেছে, সেই আগুনের আঁচ এখন ভালো মতই টের পাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একসময়ের দুর্দান্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তি এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় এবং অজানা শঙ্কায় ভুগছেন। এ শঙ্কার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে যখন গতকাল তার ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে আইন শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযোগ করেছে যে, তার বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগে এর আগে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে রয়েছে সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং ইমতিয়াজ হোসেন রুবেল। এরা সকলেই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছত্রছায়ায় ফরিদপুরে এরা একটি নতুন রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল বলেই ফরিদপুরবাসী মনে করে। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে বিকল্প রাজত্ব তৈরির চেষ্টায় এখন কাল হচ্ছে জীবনে।

গতকাল বাবরের গ্রেপ্তারের পর ফরিদপুরবাসী আনন্দ মিছিল করেছে। মিষ্টি বিতরণ করেছে। একটা সময় ছিল ফরিদপুরে বাবরেরই শেষ কথা। আর এটি সম্ভব হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের কারণে। ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি একই দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিছুদিন পরে সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই দায়িত্ব পান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়াটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিরল ঘটনা। কারণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সবসময়ই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পেয়ে এসেছিলেন। এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং সেই সময় শুধুমাত্র তার মন্ত্রণালয় নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়েও তিনি বিভিন্ন সময় নজর রাখতেন।

কিন্তু ২০১৮ সালের পরে আস্তে আস্তে তার রাজনৈতিক উত্থানের গ্রাফ নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, সেই মন্ত্রিসভায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছিলেন না। এরপর ফরিদপুর আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেই শুদ্ধি অভিযানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। দেখা যায় ছাত্রলীগের একজন চুনোপুটি নেতা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এবং সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এই তদন্ত দেওয়া হয় সিআইডিকে। সিআইডি তদন্ত করে বরকত এবং রুবেলকে গ্রেপ্তার করে। এই বরকত এবং রুবেল ছিলেন খন্দকার মোশাররফের ঘনিষ্ঠ এবং যাদেরকে দিয়ে খন্দকার মোশারফ হোসেন একটা বিকল্প আওয়ামী লীগ ফরিদপুরে তৈরি করেছিলেন তাদের অন্যতম। এরা আওয়ামী লীগের সবাই অনুপ্রবেশকারী এবং আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে এরা এমনভাবে দলকে ব্যবহার করেছিল যে পুরো ফরিদপুর একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এমনটি বলছে সিআইডি।

গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনেও সিআইডি’র পক্ষ থেকে একই রকম অভিযোগ করা হয়েছে। যে ব্যক্তিদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিশেষ করে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে গ্রেফতারের পর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এখন শঙ্কায় থাকতেই পারেন। কারণ যে সমস্ত অভিযোগগুলো তার বিরুদ্ধে এসেছে সব অভিযোগই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছত্রছায়ায় করা হয়েছে বলেই ফরিদপুরবাসী মনে করে। এখন দেখার বিষয় যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জীবনের শঙ্কার কালো মেঘের ঘনঘটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, নাকি তিনি শঙ্কা থেকে মুক্তি পান।