আজ রায় ঘোষণা: ওসি প্রদীপের ফাঁসির দাবিতে আদালতের বাইরে মানববন্ধন চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির দাবি নিয়ে কক্সবাজারে আদালতের সামনে দাঁড়িয়েছেন টেকনাফের ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা।

রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন সোমবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা আদালতের প্রবেশপথের পাশে দুটি ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান ৩০ থেকে ৪০ জন; যারা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও হয়রানির শিকার পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

‘সর্বস্তরের জনগণ টেকনাফ’, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি- কক্সবাজার জেলা শাখার ব্যানারে ওই মানববন্ধনে দাঁড়ানো কারো কারো হাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের ছবিও দেখা গেছে।

‘ওসি প্রদীপের ফাঁসি চাই’ স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি তারা সিনহা হত্যার ন্যায়বিচার দাবি করছিলেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ঘটনার প্রায় সাড়ে চার মাস পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আসামিরা দোষি কি-না, সেই রায় হওয়ার কথা রয়েছে সোমবার দুপুরের পর।

২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর টেকনাফ থানায় যোগ দেন প্রদীপ। তার আগে তিনি একই জেলার মহেশখালী উপজেলার ওসি ছিলেন।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকনাফে আসার পর থেকেই তিনি মাদক নির্মূলের আড়ালে ‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা’ করছিলেন। ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও স্থানীয় মোটামুটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নিরীহ পরিবারকে টার্গেট করে, তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, অনেককে ‘ক্রসফায়ারে দিয়ে এবং ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে’ টাকা আদায়ের ‘নির্মম নেশা’ পেয়ে বসেছিল তাকে।

ভ্রমণবিষয়ক তথ্যচিত্র নির্মাণে কক্সবাজারে যাওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান ও তার সঙ্গীরা টেকনাফের নিরীহ মানুষের উপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের কাহিনী’ জেনে গিয়েছিলেন। প্রদীপের অত্যাচারের শিকার কিছু মানুষের সাক্ষাতকারও তারা নিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রদীপের সঙ্গেও সিনহা এবং তার সঙ্গীদের কথাও হয়। এরপর বিপদ আঁচ করতে পেরে প্রদীপের পরিকল্পনায় শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়।

সিনহা হত্যার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে সব বিষয় খতিয়ে দেখে। তাদের প্রতিবেদনেও বলা হয়, টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপের ৩৩ মাসের সময়কালে ১০৬টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১৭৪ ব্যক্তি নিহত হন।

এই নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন টেকনাফের ডেইল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ (২০)। যিনি পেশায় ছিলেন রিকশাচালক।

২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সকালে স্থানীয় সোনাইয়া সওদাগরের দোকানে নাস্তা করছিলেন আজিজ। সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরিবার টাকা দেওয়ার পরও তাকে ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হয়।

সোমবার সকালে আদালতের সামনে মানববন্ধনে আজিজের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা হালিমা খাতুন। তার চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওসি প্রদীপ ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল। ভিটাবাড়ি বন্ধক রেখে ছয় লাখ টাকা দিই। তারপরেও দুদিন পর আমার ছেলেকে ক্রসফায়ার দেয়।

“আমার এখন বাড়িঘরও নেই। ছেলেও নেই।”

হালিমা খাতুন জানান, তার দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে আবদুল আজিজ ছিলেন দ্বিতীয়।

টেকনাফের হ্নীলা এলাকার বাসিন্দা মুরাদ হাসান চৌধুরী জাতীয়তাবাদী যুবদল করেন। ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়।

মুরাদ হাসানের দাবি, তার কয়েক দিন আগে দলীয় এক সমাবেশে তিনি পুলিশের ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানির’ বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। এর কারণেই তাকে ধরে নিয়ে যায়।

মানববন্ধনে তিনি বলেন, “আমাকে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ১১টি মামলা দেওয়া হয়। ১৪ মাস কারা ভোগের পর আমি জামিনে মুক্তি পাই।”