ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক নিয়মে রোগ নিরাময় করেন ডা. মুজিবুর রহমান

 


রাজিব আহমেদ
প্রচলিত চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়েও রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ বা সিনথেটিক ড্রাগস পরিহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ নিরাময় তথা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়ে শত শত রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত থাইল্যান্ড প্রবাসী চিকিৎসক ডা. মুজিবুর রহমান। তাঁর মতে, মানবদেহের জন্য যত রকমের খাবার তথা পুষ্টি দরকার, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাবারে সব বিদ্যমান। স্রষ্টা শুধু মানুষ ও প্রাণীকূল সৃষ্টি করেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি, বরং প্রকৃতিতে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান বিলিয়ে রেখেছেন। কৃত্রিম উপায়ে তৈরিকৃত খাবারগুলো মুখরোচক, সুস্বাদু, দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হলেও মানবদেহের জন্য পুষ্টিকর নয়। বাণিজ্যিক দুনিয়ার এসব খাবার শুধু মনের চাহিদা তথা চোখের ক্ষুধা মেটায়, কিন্তু শরীরের চাহিদা পূরণ করতে পারে না! মানবজীবনকে আরেকটু দীর্ঘ করার জন্য বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে লাইফ এক্সটেনশন ফাউন্ডেশন-এর মতো অনেক সংগঠন অনবরত গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যাদের মতে- অসুস্থতার প্রধান কারণই হচ্ছে কৃত্রিম খাবার ও ভুলভাল জীবনযাপন।

ডা. মুজিবুর রহমান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন- আমরা কতখানি সুস্থ হয়ে বাঁচবো- সেটা নির্ভর করে আমাদের ওপরেই। মানবদেহকে সুস্থ রাখার সকল উপাদান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রকৃতিতে- দরকার শুধু খুঁজে নেওয়ার মতো যথাযথ জ্ঞান ও ধারণা। কেবলমাত্র প্রকৃতিই পারে আমাদেরকে রোগমুক্ত জীবন উপহার দিতে। তাঁর মতে, প্রকৃতির সবচেয়ে বড় উপাদান মানুষ, যদিও মানুষের দ্বারাই প্রকৃতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে! কিছু প্রয়োজন হলে আমরা প্রকৃতির দিকেই হাত বাড়িয়ে দেই, কিন্তু প্রকৃতিকে সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করি না। প্রাকৃতিক সামগ্রীর যথেচ্ছ ব্যবহার করে মানুষ প্রকৃতিকে ক্রমশ ক্ষীণ ও দুর্বল করে ফেলছে। মানুষ অনেক কিছু তৈরি করতে শিখলেও সৃষ্টিকর্তার তৈরি (প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত) কোনোকিছুর মতো হুবুহু কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। সে কারণে প্রকৃতিকে সব সময় প্রাধান্য দিতে হবে; কোনো অবস্থাতেই প্রকৃতি-বিরুদ্ধ হওয়া যাবে না। কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করলেই আমরা পরিপূর্ণ সুস্থ থাকতে ও নিরোগ জীবনযাপন করতে পারবো।

তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে এমনভাবে নিখুঁতভাবে সাজিয়েছেন যে, এখানে কোনো অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় না। প্রকৃতি তার নিয়মমাফিক আবর্তিত হয় বা কাজ করে। এর ব্যতিক্রম যা ঘটানোর, সেটা মানুষই ঘটায়। প্রাকৃতিক উপায়কে গ্রহণ করলে স্বাভাবিক জীবন পাওয়া সম্ভব। এই পৃথিবীতে যারা যত বেশি প্রকৃতি থেকে পাওয়া খাবারের ওপরে নির্ভর করে, তারাই প্রকৃতির মতো সবুজ মন ও স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থেকেছে। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ না রেখে কাঙ্ক্ষিত সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

ডা. মুজিবুর রহমান ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার লক্ষীবরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৮১ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এ ভর্তি হন। ১৯৮২ সালে স্কলারশিপ নিয়ে রাশিয়া চলে যান। সেখানকার লু’ভব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে মেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করে এক বছর ইন্টার্নশিপ করেন। এরপর দুই বছর ইন্টারনাল মেডিসিনে বিশেষ কোর্স করেছেন।

তিনি ১৯৯৩ সালে মেডিকেল প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে রাশিয়ায় নিজের ব্র্যান্ড নিয়ে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা শুরু করেন। খুব অল্প সময়ে নিজেকে রাশিয়ার একজন সফল ইলেট্রনিক্স ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। রাশিয়ায় বসবাসরত বাংলা ভাষাভাষী লোকজন তাঁকে ব্যবসায়ী হিসেবেই চিনতেন। ব্যবসা নিয়ে তিনি এতোটাই মশগুল ছিলেন যে, নিজের শরীর তথা স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার ফুসরৎই পাননি! ফলে ব্যবসা সংক্রান্ত মানসিক চাপ এবং ধারাবাহিক অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে ২০১৩ সালে নানারকম স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্যসমস্যা ক্রমে জটিলরূপ (উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্ট্রেরল ও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক এসিড) ধারণ করলে তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক হাঁটাচলাই দুরূহ হয়ে পড়ে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইলেট্রনিক্স ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে আধুনিক ওষুধ-নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে আদর্শ খাদ্যাভ্যাস ও প্রাকৃতিক রোগ নিরাময় নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং নিজের ওপরে প্রয়োগ করে বিস্ময়কর সুফল পান। খুর অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি নিজেকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হন। কিন্তু এই সময়ে বড় ছেলে রেইনার্ত-এর অকাল মৃত্যু তাঁর সবকিছুকে ওলট-পালট করে দেয়। শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়।

ওষুধ ছাড়াই রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে ডা. মুজিবুর রহমান ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে থাইল্যান্ডের পাতায়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভেন্টেজ ন্যাচালার হেলথ ক্লিনিক-এর কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি মূলত প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণের ওপরে জোরারোপ করেন। তাঁর দেখানো পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে তিন শতাধিক দেশি-বিদেশি রোগী বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, জ্ঞানী মানুষেরা বাঁচার জন্য খান, খাবারের জন্য বাঁচেন না! লাইফস্টাইলের ভুলভাল শুধরে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করে সকল শারীরিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে প্রত্যেকটি খাবারের উৎস অবশ্যই হতে হবে অর্গানিক বা প্রাকৃতিক। কেমিক্যাল, কীটনাশক ও কৃত্রিম সার দিয়ে উৎপাদিত কোনো উপাদান ব্যবহার করা যাবে না!

টাইপ ২ ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক এসিডসহ অনেক রোগের চিকিৎসা যে প্রচলিত ওষুধ ছাড়াও সম্ভব, তার প্রমাণ ডা. মুজিবুর রহমান নিজে এবং সমগ্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাঁর অগণিত রোগীরা। মুজিবুর রহমান প্রচলিত কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন না। তাঁর টানা তিন বছরের পরিশ্রমে গড়ে তোলা ভেন্টেজ ন্যাচারাল হেলথ ক্লিনিক একটি সমন্বিত চিকিৎসা-ব্যবস্থা। সেখানে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। ভেন্টেজ ন্যাচারাল হেলথ ক্লিনিক-এ হৃদরোগ, ক্যান্সার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাটিস, হেপাটাইটিস সি, ফ্যাটি লিভার ও সিরোসিস, সোরিয়াসিস, ক্রনিক প্যানক্রিয়াটিস প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁর দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করলে অর্থাৎ প্রাকৃতিক রীতি-নীতি মেনে চললে বেশিরভাগ দৈহিক জটিলতা সেরে যাবে অথবা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সুস্থ জীবনযাপনের যে প্রাকৃতিক দর্শনটি তিনি তাঁর রোগীদেরকে হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন, সেই দর্শন মেনে চললে যে কেউ আজীবন সুস্থ থাকবেন- তা সুনিশ্চিত।

প্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনকে কিভাবে সমন্বয় করা যায়- সে বিষয়ে ডা. মুজিবুর রহমান তাঁর রোগীদেরকে কাউসেলিং করেন। তাঁর দেখানো মত ও পথ অনুসরণ করে দেশ-বিদেশের অগণিত রোগী ওষুধের সংস্পর্শ ছাড়াই নিরোগ তথা সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনযাপন করছেন।

ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এক সময় প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল সংক্রামক রোগ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগের ধরনেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। বদলে গেছে জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাস। তামাকের বহুল অপব্যবহার, অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত (চর্বি ও চিনি) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ, অতিরিক্ত লবণ সেবন, কায়িক শ্রমের অভাব, মানসিক চাপ বৃদ্ধি, সর্বোপরি স্মার্টফোন ও অনলাইন আসক্তির কারণে মাঠে খেলাধুলা কমে যাওয়ায় অসংক্রামক বা অটো ইমিউন ডিজিজ বা ডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এদিকে থাইরয়েড জটিলতা বাংলাদেশে এক রকম মহামারী আকার ধারন করেছে। মূলত অস্বাস্থ্যকর ও কৃত্রিম খাবার গ্রহণের কারণেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়- যা প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিরাময়যোগ্য।

মানবদেহে শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন এবং এর পাশাপাশি চর্বি বিপাকেও (Fat Metabolism) সহায়তা করে থাইরয়েড হরমোন, কিন্তু সেখানে গন্ডগোল বেঁধে গেলে দেহের অনেককিছুই ঠিক থাকে না! তাঁর মতে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা জরুরি অবস্থা সাময়িকভাবে মোকাবিলা ছাড়া সম্পূর্ণ সুস্থতা সুনিশ্চিত করতে অক্ষম; তাই ওষুধ (আসলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত সিনথেটিক ড্রাগস)-কে না বলুন। কেননা ড্রাগস সেবন মানে একটা রোগকে দমিয়ে রাখতে গিয়ে অন্যান্য রোগকে স্বাগত জানানোর প্রেক্ষাপট তৈরি করা! এমতাবস্থায় যার যার স্বাস্থ্যের বিষয়ে তাঁকেই যত্নশীল হতে হবে। কেবলমাত্র প্রাকৃতিকভাবে চাষকৃত ও প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত খাবারই পারে মানুষকে পরিপূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনদান করতে। এর পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনযাপনে প্রাকৃতিক নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে।

ডা. মুজিবুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা কি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া বিপুলা প্রকৃতির সহায়তা নেবো নাকি প্রচলিত বাণিজ্যিক চিকিৎসা-ব্যবস্থা অনুযায়ী সারাজীবন ওষুধ নামক সিনথেটিক ড্রাগস-এর ওপরে নির্ভর করে যেনতেন উপায়ে বাঁচার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো?

তিনি জানান, মানুষের শরীরে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিস্টেম রয়েছে- যা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে বর্জ্যগুলো বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কোষের বর্জ্য অপসারণ পদ্ধতি (ইন্টার সেলুলার গারবেজ ডিসপোজাল সিস্টেম)। মূলত তিনটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়া যথাক্রমে প্রোটিজম এনজাইম, অটোফেজি ও লাইসোজম- যার যৌথ নাম কোষাভ্যন্তরের বর্জ্য অপসারণ পদ্ধতি (ইন্টার সেলুলার ডিটক্সিফিকেশন)। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ভারসাম্যপূর্ণভাবে কাজ না করলে মানবদেহে শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে- যা থেকে সূত্রপাত হবে নানা ধরনের ঘাতক ব্যাধির। কোষাভ্যন্তরের বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া ঠিকঠাক কাজ না করলে কোনো ওষুধই মানুষের রোগ সারাতে পারবে না। তাঁর মতে, প্রতিনিয়ত নানাভাবে, নানা উপায়ে দেহে যে বিষাক্ত উপাদান ও কেমিকেল ঢুকছে, তার থেকে পরিত্রাণ পেতে মাঝে-মধ্যে খাদ্য-বিরতি দিতে হবে। যেমন রোজা রাখলে মানবদেহে শুদ্ধিকরণ চলে… রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো বিশুদ্ধ (ফিল্টারড) হয়।

ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, কোষগুলো সন্মিলিতভাবে টিস্যু তৈরি করে, টিস্যুগুলো তৈরি করে অঙ্গ আর অঙ্গগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় মানবদেহ। কোষের সন্মিলিত প্রধান কাজ দেহকে সচল ও সক্রিয় রাখার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন এবং কোষের এসিডিক বর্জ্য (টক্সিন) অপসারণ করা। শ্বসন, রেচন ও বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সূত্রটি এ রকম : অক্সিজেন + নিউট্রিশন = শক্তি বা জীবনীশক্তি [Oxygen + Fuel (Carbs and/or Fats) + Water = Energy]। তার মানে শক্তির উৎস হিসেবে যে খাবার (জ্বালানি হিসেবে) ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো চর্বি বা ফ্যাট। চর্বির একটি অণু মানবদেহে ১৩০টি অণু সমপরিমাণ শক্তি (ATP) যোগায়। এই কাজগুলো সঠিকভাবে সুসম্পন্ন হওয়ার নামই সুস্থতা। স্বাভাবিকভাবে একজন সুস্থ মানুষ শুধু শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমেই রক্তে ও কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। অক্সিজেনের অভাব হলে কোষগুলো দেহের চাহিদা অনুযায়ী শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। কোষগুলো পর্যাপ্ত নিউট্রিশন পাচ্ছে, কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না- এমন পরিস্থিতিতে দেহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর্মোদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, মানবদেহের সেলুলার এনার্জি উৎপাদনই নির্ধারণ করবে মানুষটা সুস্থ থাকবে নাকি অসুস্থ হবে? ডায়বেটিস টাইপ ২, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ক্যান্সারসহ ৬০ ধরনের ডিজেরেটিভ রোগ শক্তির ঘাটতির কারণে দেহে বাসা বাঁধতে পারে। কতদিন বাঁচবেন- সেই নিয়ন্ত্রণ আমাদের কারো হাতে নেই, কিন্তু আমৃত্যু সুস্থভাবে বাঁচাটা যার যার কর্মফল! মনে রাখবেন- শরীর ঠিক তো কর্মস্থলে ফিট, কর্মেও হিট! আপনি যদি ক্রমাগত অক্সিডাইজড খাবার খেতে থাকেন, সেক্ষেত্রে সুস্থ থাকতে পারবেন না। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এতোকিছু খাওয়া বাদ দিলে জীবনের মানে কী? বেঁচে থাকাই তো অর্থহীন! কিন্তু ভেবে দেখুন- বাছ-বিচার করে না খাওয়ার কারণেই একপর্যায়ে খাবারের বদলে অস্বাভাবিক মাত্রায় নানারকম ওষুধ (আসলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত সিনথেটিক ড্রাগস) সেবন করতে হচ্ছে, তবু শেষ রক্ষা হচ্ছে না! সুতরাং সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে যে, কিভাবে বাঁচবেন- খাবারটাকেই ওষুধ হিসেবে খাবেন নাকি ওষুধকে খাবারের মতো খাবেন? জীবনযাপনের সকল পরিবর্তন হয়ত একদিনেই ঘটানো সম্ভব নয়, তবে একটু একটু করে চেষ্টা করলে দেহ অচিরেই সবকিছু মেনে ও মানিয়ে নেবে। আমাদের জিহ্বার স্বাদ গ্রহণের সাইকেলটি ১৪ দিন পরপর পরিবর্তন হয়। জিহ্বায় স্বাদ লাগছে না- এমন খাবারও যদি ১৪ দিন খাওয়া অব্যাহত রাখেন, সেক্ষেত্রে ১৪ দিন পর ওই খাবারটিতেই স্বাদ পাবেন। আমাদেরকে বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে হবে যে, দীর্ঘদিনের অনিয়মের কারণে অসুস্থ দেহকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে তুলতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন।

ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, বাজারের ভোজ্য তেল (পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) সম্পূর্ণ অক্সিডাইজড- যা দেহে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি করে। এই ফ্রি রেডিক্যালগুলো দেহের প্রাকৃতিক কোলেস্ট্রেরলকে আক্রমণ করে সেগুলোকে অক্সিডাইজড কোলেস্ট্রেরল-এ পরিণত করে। এই অক্সিডাইজড কোলেস্ট্রেরল এবং অক্সিডাইজড ফ্যাট ধমনির ভেতরের গাত্রে (আর্টারিয়াল ওয়াল) ক্ষত সৃষ্টি করার ফলে সেখানে ধীরে ধীরে ব্লকেজ তৈরি হতে থাকে। এভাবেই হৃদরোগের সূত্রপাত হয়… যদিও যেটা ধরা পড়ে আরো কয়েক বছর পরে ক্রমাগত ভুলভাল জীবনযাপন আর উল্টাপাল্টা খাদ্যাভ্যাস চালিয়ে গেলে। তাঁর মতে, যেসব মানুষের দেহে অ্যালকাইন, তারা সাধারণত সব সময় কোমল, উদার, আশাবাদী, ইতিবাচক, পরোপকারী ও মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং বিনোদনপ্রেমী হন। অন্যদিকে যাদের দেহ অ্যাসিডিক, তাদেরকে প্রায় সব সময় নেতিবাচক, আত্মকেন্দ্রিক, বদমেজাজি, উগ্র ও হতাশাবাদী হতে দেখা যায়। এ ধরনের মানুষের মাঝে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা থাকে।

তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ভোজ্য তেল-এর নামে বাজারে যা কিছু বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো মোটেও ভোজনযোগ্য নয়! এক কেজি সয়াবিন বীজ পিষে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ গ্রাম তেল বের করা সম্ভব। কিন্তু বাণিজ্যিক উৎপাদনকারীরা এক কেজি বীজকে প্রচণ্ড তাপ দিয়ে এবং এর সঙ্গে আরো অনেক সিনথেটিক কেমিকেল মিশিয়ে প্রায় এক কেজি সমপরিমাণ তেলই বের করে- যে কারণে তেলের খাদ্যগুণ বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না! এরপর রান্নার সময় আরো একবার তাপে (উত্তপ্ত হয়ে) এই তেল দেহের জন্য ক্ষতিকারক উপাদানে পরিণত হয়। ওদিকে, দুধ পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার, কিন্তু দোকানে বিক্রিত সব দুধই অক্সিডাইজড। এগুলো হোমোজিনাইজেশন ও পাস্তুরাইজেশনের ফলে অক্সিডাইজড ফ্যাট তৈরি করে- যা এনজাইম নষ্ট করে দেয়। প্রাকৃতিক অবস্থায় দুধে ল্যাকটোফেরিন (এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, এন্টি-ভাইরাল এবং ইমিউন রেগুলেটর) থাকে। কিন্তু পাস্তুরাইজ করলে এসব উপকারি উপাদান ধ্বংস হয়ে যায়!

ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, মানবদেহ একটি ঘড়ির ছন্দ মেনে চলে। তার মানে প্রতিটি হরমোন, প্রতিটি কোষ, প্রতিটি অঙ্গের প্রতিটি রাসয়নিক কার্যক্রম এবং এনজাইম নিঃসারিত হয় এই ছন্দ মেনে। একসঙ্গে যেমন অনেক খাবার গ্রহণ ঠিক নয়; তেমনি খুব ঘনঘন খাবার খাওয়াও অনুচিত, বরং বিরতি দিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য উপকারি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই পদ্ধতিকে বলে বিরতি দিয়ে খাওয়া বা টাইম রেস্টেড ইটিং। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো- এনজাইম সমৃদ্ধ খাবার ও সতেজ বা টাটকা খাবার এবং অক্সিডাইজড, বাসি, খাদ্যগুণবিহীন খাবার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রাকৃতিক, নিরাপদ ও টাটকা খাবারের সমন্বয়ে একটি সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করতে হবে। খাবার মুখে নেওয়ার পর খুব ভালোভাবে চিবাতে হবে। কেননা আমাদের মুখ থেকেই খাদ্য হজমের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তিনি বলেন, মানবদেহে সঠিকভাবে রক্ত চলাচলের গুরুত্ব অনেক। কেননা রক্ত দেহের নানা অংশে অক্সিজেন বহন, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সেজন্য দেহে রক্তকে থাকতে হবে পাতলা। রক্ত পাতলা না হলে দেহে রক্ত প্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে জমাট বাঁধতে পারে। বিশেষ করে ধমনীতে জমাট বাঁধলে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধলে স্ট্রোক বলা হয় আর হৃদপিণ্ডে জমাট বাঁধলে হার্ট এটাক বলে। রক্তকে প্রাকৃতিক উপায়ে তরল রাখতে পূর্ণ শস্যের (হোল গ্রেইন) সঙ্গে শাক-সবজি খেতে হবে। এর পাশাপাশি লাল মরিচ, আদা, দারুচিনি, গোল মরিচ, হলুদ, যষ্টিমধু, পুদিনা পাতা, কিসমিস, আলু বোখারা, চেরি, ক্রেনবেরি, ব্রকলি, মধু, অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার, ফুলকপি, ব্রাসেল স্প্রাউট ইত্যাদি খাবারগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখবেন।

ডা. মুজিবুর রহমান জানান, মেডিসিনাল নারকেল তেল এবং অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় খাবার। এরা কোলনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীদের নষ্ট করে, দেহে pH-এর ভারসাম্য বজায় রাখে, অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে আনে এবং হেলিকোব্যাক্টর বা আলসারের জন্য দায়ী জীবাণু থেকে পাকস্থলীকে সুরক্ষা দেয়। আর্থ্রাইটিস ও ইউরিক এসিডজনিত সমস্যা লাঘবে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই ফলদায়ক। এটি ওজন কমায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট chlorogenic acid থাকে- যা আমাদের জন্য ভালো কোলেস্টেরল LDL-কে অক্সিডাইজড হতে বাধা দেয়। সে কারণে প্রকৃতির অনন্যগুণে সমৃদ্ধ এই দু’টি খাদ্যোপকরণ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, মানবদেহের সুস্থতা অনেকাংশে অন্ত্রের ওপরে নির্ভরশীল। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষের ৭০% অন্ত্রের ভেতরে বসবাস করে। আমাদের অন্ত্রে হাজার রকমের কোটি কোটি ক্ষুদ্র অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া) বসবাস করে। এগুলোকে আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োটা বলে। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এরা নিরাপত্তা প্রহরীর মতো কাজ করে। এরা খাদ্য পরিপাক ও পুষ্টি পরিশোধনে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়ায়, এমনকি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকেও সুরক্ষা দেয়। অন্যভাবে বললে অন্ত্রের হাল-অবস্থা্ই আমাদের দেহের অন্যান্য অংশে প্রকাশ পায় কিংবা আমাদের জীবনযাত্রার চিত্রটি অন্ত্রে ফুটে ওঠে।

তিনি আরো বলেন, শরীরের সত্যিকারের আরাম মুখরোচক খাবারে নয়, বরং মলত্যাগের স্বস্তিতে নিহিত! কেউ পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরও যদি প্রতিদিন একবার মলত্যাগ না করেন, তাহলে একে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য বলা হয়। পরিপাকতন্ত্রের একটি অংশ অন্ত্র- যা পাইপের মতো এবং ক্ষুদ্রান্ত ও মলাশয়ের মাঝে সংযোগ স্থাপনকারী। নানাবিধ রাসায়নিক বিক্রিয়ার পর এখানে মল তৈরি হয়- যা স্নায়ু ও হরমোনের সিগনাল বিনিময়ের মাধ্যমে মলাশয়ে এসে জমা হয়; পরে মলদ্বার দিয়ে নির্গত হয়। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে IBS নিরাময় হয় না, কিছু ওষুধ সেবন করিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার বৃথা চেষ্টা করা হয় মাত্র। কিন্তু প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব এবং নিয়ম মেনে চললে আর কখনোই সমস্যা হবে না।

ডা. মুজিবুর রহমান-এর মতে, আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য আমাদের কোলনের সুস্থতার ওপরে প্রায় শতভাগ নির্ভরশীল। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে যদি সবকিছুর আয়োজন করা হয়, কিন্তু আপনার কোলন পরিষ্কার ও সুস্থ না থাকলে কোনো চেষ্টাই আপনাকে সাহায্য করবে না। কোলন পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কোলনে বাস্তবসম্মত উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার উপযোগী খাবার প্রয়োজন। জন্মের পর শিশুর অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া যেন আবাস তৈরি করতে পারে- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর ওপরেই বাকি জীবন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া বা না হওয়া নির্ভরশীল। সে কারণে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। বাইরের কোনো দুধই শিশুর জন্য উপকারি আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োটা যোগানে বিন্দুমাত্র কাজে আসে না।

তিনি বলেন, মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পেছনে অন্ত্রের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষের ৭০% অন্ত্রের ভিতরে থাকে। আমাদের অন্ত্র যেহেতু অসংখ্য নিউরন বা স্নায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত, সে কারণে একে মানবদেহের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ বা সেকেন্ড ব্রেইনও বলা হয়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়- শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চেয়ে মানবদেহের অন্ত্র বা কোলন বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এটি মস্তিষ্কের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও স্বাধীনভাবে নিজের কার্যক্রম চালায়। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে অন্ত্রের সুস্থ ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকাও অপরিসীম।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে ৮০% থেকে ৯০% সেরোটনিন উৎপন্ন হয়। সেরোটনিন এক ধরনের রাসায়নিক বার্তাবাহক যার সঙ্গে আমাদের পরিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে মানসিক অবস্থা ও রোগ সংক্রান্ত শরীরের নানা কার্যক্রম জড়িত। সেরোটনিন-এর নিঃসরণের ওপরে নির্ভর করে আমাদের মেজাজ ভালো থাকা না থাকা। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবাবেগ শরীরে সেরোটনিন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে- যা আমাদের মন-মেজাজ, উদ্বেগের মাত্রা এবং সুখের মতো মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।

ডা. মুজিবুর রহমান জানান, ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম (IBS) বলতে কতগুলো উপসর্গের সমষ্টিকে বোঝায়। পরিপাকতন্ত্রের এই জটিলতাকে ফাংশনাল ডিজঅর্ডারও বলে। এই রোগে অন্ত্রের (লার্জ ইন্টেস্টিন) স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। সে কারণে রোগীর পাতলা পায়খানা, আমাশয়, গ্যাস, টক ঢেঁকুর, পেটভার, কখনো পায়খানা না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা একই সময় অথবা পৃথকভাবে দেখা দিতে পারে। যাদের কোলন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিসংবেদনশীল, তারাই IBS-এ বেশি আক্রান্ত হন। বিশেষ করে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল মানুষের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি। পরিপাকক্রিয়া ভালোভাবে সম্পন্ন বা হজম না হলে মানবদেহে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি সচেতনভাবে প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করলে অনেক জটিলতাই দূর করা সম্ভব। কেননা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো খুব সহজেই শারীরিক অনেক সমস্যার সমাধান করে।

তিনি বলেন, কোলেস্ট্রেরলের প্রয়োজনীয়তা মানবদেহে অবধারিত। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য কোলেস্ট্রেরল-এর প্রয়োজন হয়। স্টেরয়েড হরমোন ও সেক্স হরমোন উৎপন্নের প্রধান কাঁচামালও এই কোলেস্ট্রেরল। ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখার পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। মোদ্দাকথা কোলেস্ট্রেরল ছাড়া কোনো অঙ্গই তাঁর কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, কলিজা নিজেই যেখানে ৮০% কোলেস্ট্রেরল উৎপন্ন করে নেয়, সেখানে খাবারের মাধ্যমে রক্তে আসা কোলেস্ট্রেরল-এর বিশেষ কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে। কলিজায় বেশিরভাগ ট্রাইগ্লিসারাইড উৎপন্ন হয় শর্করা থেকে, ভালো বা স্বাস্থ্যসম্মত চর্বি থেকে নয়। সে কারণে কলিজার যত্ন নিতে হবে, কোলন পরিষ্কার রাখতে হবে, পরিশোধিত সাদা চিনি, আলগা তেল, বাজারের খোলা খাবার, ফাস্টফুড পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। তাহলে হৃদপিণ্ডের ব্লকেজ নিয়ে আলাদা করে দুশ্চিন্তা করার দরকারই হবে না। পরিশেষে তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ- ধূমপান এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা কখনো একসঙ্গে চলতে পারে না!