কারণ ছাড়াই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, অসহায় ভোক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই কমছে না। সরকার কোন কার্যকর ব্যবস্থাই নিতে পারছে না। সর্বশেষ সাতদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি আদা ৫০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। এছাড়া এখনো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ডিম। প্রতি ডজন ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। ফলে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সংস্থাটির বৃহস্পতিবারের দৈনিক খুচরা পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাতদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৮.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি কেজিপ্রতি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫.৪১ শতাংশ। সঙ্গে প্রতি কেজি দেশি আদা ১১.৭৬ শতাংশ, দেশি হলুদ ৭.১৪ শতাংশ, আমদানি করা হলুদ ১২.০৭ শতাংশ, দেশি রসুন ২.৩৮ শতাংশ, আমদানি করা রসুন ২.২২ শতাংশ মূল্য বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহে কোনো ধরনের ঘাটতি দেখা যায়নি। প্রতিটি বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য দেখা গেছে। বিক্রেতারাও ক্রেতার চাহিদামতো বিক্রি করছেন। কিন্তু দাম বেশি। ক্রেতারাও এসব মসলাজাতীয় পণ্য কিনতে এসে বাড়তি দামের কারণে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা বলছেন, বাজারে পণ্য থাকার পরও বিক্রেতারা কুরবানির ঈদের আগে থেকেই বাড়তি দামে সব ধরনের মসলা পণ্য বিক্রি করছেন। আর প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। যে কারণে এসব পণ্য কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়তে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০, যা সাতদিন আগেও ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, যা সাতদিন আগে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৩০, যা সাতদিন আগে ২২০ টাকা ছিল। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০, যা সাতদিন আগেও ২১০-২৪০ টাকা ছিল। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি ও আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০, যা সাতদিন আগে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ভালোমানের দেশি আদা কিনতে ক্রেতার খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০, যা সাতদিন আগে ৪৫০ টাকা ছিল। আর সাধারণ মানের দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০, যা আগে ৪০০ টাকা ছিল।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০, যা সাত দিন আগে ১৯০ টাকা ছিল। সঙ্গে কিছুটা কমেছে দেশি মুরগির দামও। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০, যা সাতদিন আগে ৬৫০-৭০০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা কমলেও এখনো বাজারভেদে ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুরবানির ঈদের আগে থেকে মসলা পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। ঈদের পরও তা অব্যাহত আছে। কিন্তু বাজারে এসব পণ্যের কোনো সংকট নেই। তিনি বলেন, বাজারে পণ্যমূল্য যারা নিয়ন্ত্রণ করবে, তারাও চোখে টিনের চশমা পরে আছে। শুধু লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। মিডিয়ায় এমনও দেখেছি, তদারকি সংস্থার কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে বলছেন কোন পণ্যের দাম কত হওয়া উচিত আর তারা কত টাকা বেশি বিক্রি করছেন। কিন্তু কোনো আইনের আওতায় আনছেন না। বরং ব্যবসায়ীদের হুংকারে চলে আসছেন। তাহলে কি আমরা ভোক্তারা কোনো রেহাই পাব না? বেশি দামেই পণ্য কিনতে হবে?

আমদানি পর্যায় ও পাইকারি বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। তবে পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বেশি দামে কিনে আনলে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। কারণ, আমরা ব্যবসা করি। তাই কেন দাম বেড়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

রাজধানীর শ্যামবাজারের মসলা পণ্যের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। যে কারণে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনায় বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। পাশাপাশি ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি করা সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম বেড়েছে। আমদনি পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতারা অতিরিক্ত মুনাফা করার কারণে মসলা পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।