কোরআনে বর্ণিত নবীজি (সা.)-এর গুণাবলি

মহানবী (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণের বাহক। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ বানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলের মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)

নবীজি (সা.)-এর উত্তম গুণাবলি সংক্রান্ত কয়েকটি নির্বাচিত আয়াত উল্লেখ করা হলো।

১. সুসংবাদ দানকারী : মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৫)

২. সতর্ককারী : রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবজাতিকে ভ্রষ্টতা ও পাপাচারের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সত্যসহ শুভ সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামিদের সম্পর্কে আপনাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৯)

৩. উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ : মানবজাতির জন্য আল্লাহ উজ্জ্বল প্রদীপের মতো আলো দানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(আপনি আপনাকে প্রেরণ করেছি) আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৬)

৪. উত্তম চরিত্রের অধিকারী : মহানবী (সা.) ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা : কালাম, আয়াত : ৪)

৫. হৃদয়বান : রাসুলুল্লাহ (সা.) সবার প্রতি ছিলেন দয়াশীল। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন। তোমাদের যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৮)

৬. স্বাধীন চিন্তার অধিকারী : রাসুলুল্লাহ (সা.) কারো মতামত দ্বারা প্রভাবিত হতেন না, বরং তিনি আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল রয়েছেন, তিনি বহু বিষয়ে তোমাদের কথা শুনলে তোমরাই কষ্ট পেতে।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৭)

৭. কোমল আচরণের অধিকারী : মহানবী (সা.) ছিলেন কোমল আচরণের অধিকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন, যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

৮. সুপথের অধিকারী : রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সুপথের অধিকারী। আল্লাহ বলেন, ‘শপথ নক্ষত্রের, যখন তা হয় অস্তমিত, আপনার সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ১-২)

৯. আমানতদার : সমগ্র আরবে মহানবী (সা.)-এর আমানতদারির সুনাম ছিল। পবিত্র কোরআনে তাঁর সততার বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তিনি মনগড়া কথাও বলেন না। এটা তো ওহি, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন ফেরেশতা। সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৫-৬)

১০. অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর : মহানবী (সা.) আল্লাহর শত্রু অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর-হৃদয় ছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ ও তাঁর সহচররা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।’ (সুরা : ফাত্হ, আয়াত : ২৯)

১১. নিরক্ষর নবী : রাসুলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীর কারো কাছ থেকে অক্ষরজ্ঞান লাভ করেননি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই উম্মিদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ২)

১২. লজ্জাশীল : নবীজি (সা.)-এর ভেতর লজ্জাবোধ ছিল অত্যন্ত প্রখর। আল্লাহ বলেন, ‘খাওয়া শেষে তোমরা চলে যেয়ো, কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ে যেয়ো না। কেননা তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, তিনি তোমাদের উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)

১৩. বীরত্ব ও সাহসিকতা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনকালে দুটি যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সাময়িক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। কিন্তু মহানবী (সা.) চরম সংকটের সময়ও যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করেননি। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, তোমরা যখন ওপরের দিকে ছুটছিলে এবং পেছন ফিরে কারো প্রতি লক্ষ করছিলে না, রাসুল তোমাদের পেছন দিক থেকে আহবান করছিলেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৩)

১৫. ধৈর্যশীল : দ্বিন প্রচারে মহানবী (সা.) ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। আপনার ধৈর্য তো আল্লাহরই সাহায্যে। তাদের দরুন দুঃখ করবেন না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে আপনি মনঃক্ষুণ্ন হবেন না।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৭)

১৬. মঙ্গলকামী : রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণকামী। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন। তোমাদের যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৮)

১৭. দ্বিন প্রচারকারী : দ্বিন প্রচারের জন্য মহানবী (সা.) তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘(আপনি আপনাকে প্রেরণ করেছি) আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৬)

১৮. জগত্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ : আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ হিসেবে পাঠিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে জগত্গুলোর জন্য অনুগ্রহরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

১৯. ব্যথিত হৃদয় : মহানবী (সা.) মানবজাতির বিপথগামিতা থেকে ব্যথিত হতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা মুমিন হচ্ছে না বলে আপনি হয়তো মনঃকষ্টে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বেন।’ (সুরা : আশ-শুআরা, আয়াত : ৩)

২০. সমগ্র মানবজাতির নবী : রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত নবী। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ২৮)

উল্লেখ্য, এসব আয়াত ছাড়াও এমন অসংখ্য আয়াত আছে, যেগুলো মহানবী (সা.)-এর উত্তম গুণাবলির সাক্ষ্য বহন করে।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণীয় গুণাবলি অনুসরণের তাওফিক দিন। আমিন।