খানসামায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন

জসিম উদ্দিন, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ তেল ছাড়া বাতি জ্বলে আজব এ শহরে, মাটি ফাইটা বৃষ্টির পানি ঝরঝরিয়ে পড়ে”আশির দশকে চলচিত্রের এ গানটিতে বোঝা যায় সে সময়ে বেশি ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। সিনেমার কাহিনীতে দেখা যায় গ্রামের লোক ঢাকা শহরে বেড়াতে এসে বৈদ্যুতিক বাতি ও ফুয়ারার পানি দেখে আশ্চর্য হয়ে এ গানটি গায়।

একসময় বাড়িতে কেরোসিন তেল দিয়ে হারিকেন, কুপি বাতি জ্বালানো হতো। হ্যাজাক জ্বালিয়ে গ্রামাঞ্চলে বিয়ে-সাদীসহ রাতে নানা ধরনের বড় অনুষ্ঠান করা হতো। সে সময় ডাকপিয়নরা চিঠির বোঝা পিঠে করে হাতে হারিকেন নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুঁটতেন।

কিন্তু আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তির পথে। বৈদ্যুতিক বাতি, চাজার্র ও সৌর বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে সেই হারিকেনের ব্যবহার আজ আর দেখা যায় না। বর্তমানে হারিকেন খুঁজে পাওয়া হয়তো দুষ্কর হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ নেই এমন গ্রামেও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যেখানে বিদ্যুৎ নেই,সেখানে হারিকেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে সৌর বিদ্যুতের আলো বা চার্জার লাইট।গ্রামাঞ্চলে এখনও হয়তোবা দু’এক বাড়িতে হারিকেন পাওয়া যেতে পারে,কিন্তু দেখা যাবে সেগুলোতে ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খানসামা উপজেলার ছাতিয়ান গড় গ্রামের প্রবীণ এন্তাজুল ইসলাম জানান, ছোট বেলায় তারা হারিকেনের আলোয় লেখাপড়া করেছেন। সে সময় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের আলো ছিল না। হারিকেনের মৃদু আলোয় লেখাপড়া করতে হয়েছে।তিনি আরো জানান,হারিকেনের আলো মৃদু হলেও সে সময় শিক্ষার্থী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের চোখের তেমন সমস্যা হতো না।

কিন্তু আজ বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে শিশু ও প্রবীনদের চোখের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছি।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। নতুন প্রজন্ম হয়তো হারিকেন সম্পর্কে জানবে না পড়তে হবে ইতিহাস। হয়তো এক সময় হারিকেনের দেখা মিলবে জাদুঘরে।