গারো নেতা পরেশ চন্দ্র মৃ এর ২৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হলো

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে পিতা রায়চান নকরেক এবং মাতা দেঙা মৃ-এর কোলে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে পরেশ চন্দ্র মৃ এর শুভ আগমন ঘটে। মধুপুরের আদিবাসীদের বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্মের চেতনাতে জাগ্রত করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর সীমাহীন অবদানের জন্য এলাকাবাসী এই কিংবদন্তি মহাপুরুষ পরেশ চন্দ্র মৃ-কে আবিমানি “গারো রাজা” উপাধি প্রদান করেন।

গারো নেতা পরেশ চন্দ্র মৃ এর ২৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হলো

আজ রবিবার (৭ ই মার্চ) স্বর্গীয় আবিমানি গারো রাজা পরেশ চন্দ্র মৃ ২৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের আয়োজনে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন মিঃ অজয় এ মৃ ( সহ সভাপতি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম), মিঃ রিচার্ড বিপ্লব সিমসাং ( সিনিয়র সহ সভাপতি, জয়েনশাহী) ফাদার লরেন্স রিবেরিও সি.এস.সি ( পাল পৌরহিত পীরগাছা ধর্মপল্লী, জন জেত্রা ( সভাপতি, বাগাছাস, কেন্দ্রীয় কমিটি), মিঃ এপ্রিল পৌল মৃ ( প্রধান শিক্ষক, ভূটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়), মিঃ অরুন এ মৃ (প্রধান শিক্ষক, পীরগাছা সেন্ট পৌলস হাইস্কুল) মিঃ গৌরাঙ্গ বর্মন ( সাধারণ সম্পাদক, কোচ আদিবাসী সংগঠন, মধুপুর শাখা) মিঃ নিউটন মাজি ( সভাপতি, বাগাছাস মধুপুর শাখা) পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মুকুল দারু সঞ্চলনা করেন মিঠুন হাগিদক ( সভাপতি, আজিয়া)।

স্মরণসভা, প্রার্থনা ও আলোচনার মাধ্যমে পালিত হলো আ.বিমানি গারো রাজা ও জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা অবিসংবাদিত নেতা স্বর্গীয় পরেশ চন্দ্র মৃ এর ২৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও স্মরণ  করেন। তিনি ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৬২ সনে প্রথমে শুধু চুনিয়া গ্রামের আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদের পায়তারা করেছিল। পরেশ বাবুর নেতৃত্বে আদিবাসীদের প্রতিবাদ জোড়ালো হওয়ায় তারা এই নেতাকে পার্কের নির্ধারিত এলাকার বাইরে বা টাঙ্গাইল শহরে রাজকীয় বাড়ী অথবা ক্ষতিপূরণবাবদ তাঁর চাহিদা অনুসারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরেশ চন্দ্র মৃ জাতির অস্থিত্বকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সকল প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে উলটো জনগণকে সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি তখনই ঘোষণা দেন, “এই গ্রাম এবং এই বন ছেড়ে আমরা কোথাও যাবো না। আমরা বনের সন্তান, বন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না”।

এছাড়াও ১৯৬৭ সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর মোনায়েম খাঁনের আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং পুনর্বাসনের ঘোষনা, ১৯৬৮ সনে পুনরায় চুনিয়া গ্রাম উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের নোটিশ করা হয়েছিল। ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মন্ত্রীপরিষদ নিয়ে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার উদ্দেশে দোখলায় আসেন। তখনও শেখ মুজিব নিজেই ঘোষনা দিয়েছিলেন আদিবাসী গ্রাম উচ্ছেদ হবেনা বলে। অবশেষে ১৯৮০ সালে জিয়ার সামরিক শাসন আমলে সামরিক আইন অনুযায়ী আবার উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সবক্ষেত্রেই দৃঢ় মনোবলের অধিকারী বাবু পরেশ চন্দ্র মৃ এলাকার লোকজনদের সংগঠিত করে সরকারের বিভিন্ন দফতরে প্রতিবাদ লিপি পেশ করে সৎসাহস দেখিয়েছেন, সফল হয়েছেন। একারণেই তিনি গারো নেতা, একারণেই তিনি আবিমানি ‘গারো রাজা’।