চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ পন্যজটের কারণে বেহাল দশা

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্রগ্রাম বন্দরে পণ্যজটে বেসামাল হয়ে পড়েছে কতৃপক্ষ। এ অবস্থায় বেসরকারি ডিপোতে কনটেইনার স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে সাধারণত ৪৯ হাজার কনটেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা আছে। গত সোমবার কনটেইনার ছিল প্রায় ৪২ হাজার। এসব কনটেইনারের মধ্যে প্রায় ৪১ হাজারই ছিল পণ্যভর্তি।

তাছাড়া জাহাজে অপেক্ষমান আছে ৩ লাখ টন পণ্য। বন্দর জেটিতে থাকা ৯টি জাহাজে আছে প্রায় ২০ হাজার টন পণ্যবোঝাই কনটেইনার। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন জট লেগেছে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্যের।বন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার আমদানি কনটেইনার নামছে বন্দর জেটিতে। কিন্তু ঈদের পরদিন থেকে রোববার রাত পর্যন্ত তিন দিনে সরাসরি বন্দর থেকে মাত্র ৩২৫টি আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার খালাস হয়েছে ২ হাজার ১৯টি কনটেইনার। অথচ স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার কনটেইনার খালাস হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি ডিপোতে কনটেইনার স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকদেরও চিঠি দিয়েছে তারা।

চামড়া, খাদ্য ও ওষুধ-সংশ্নিষ্ট শিল্প ছাড়া সব ধরনের শিল্পকারখানা ঈদের পর বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দুই-তিন দিনের মধ্যে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনার জমে যাবে বন্দরে।বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, বহির্নোঙ্গরে কনটেইনারবোঝাই ২০টি জাহাজ আছে। আর জেটিতে আছে ৯টি জাহাজ।চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদা মিল্লাত জানান, ২৯টি জাহাজে খালাসের অপেক্ষায় থাকা ৩০ হাজার কনটেইনারে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। দ্রুত পণ্য খালাস করতে আমরা বিভিন্ন ফোরামে চিঠি দিয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দরে জট কমাতে সব ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ১৯টি) বেসরকারি ডিপোতে সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদনও চেয়েছি মন্ত্রণালয়ে।রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ও খালি কনটেইনার নিয়ে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হিমশিম খাচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে জাহাজসংখ্যা বাড়িয়ে এ সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে ওঠে তারা। তবে বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে এখনও আছে ১৩ হাজার পণ্যবোঝাই রপ্তানি কনটেইনার। এর মধ্যে সব ধরনের আমদানি কনটেইনার রাখার নতুন অনুমতি মেলাতে ব্যস্ততা বাড়বে বেসরকারি ডিপোর। এটি নিয়ে শঙ্কিত রপ্তানিকারকরা। কারণ রপ্তানি পণ্য শতভাগ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ সম্পন্ন হয় বেসরকারি ডিপোতে।

আমদানি পণ্যের জট কমাতে গিয়ে এখন রপ্তানি পণ্যের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পকারখানা খোলা রাখার দাবি ছিল ব্যবসায়ীদের। সেটি করা হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তবে যে কোনো মূল্যে বন্দর সচল রাখতে হবে আমাদের।

এদিকে, বন্দর থেকে দ্রুত আমদানিকৃত কনটেইনার সরাতে গত শনিবার বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, বিজিএমইর প্রথম সহসভাপতি এবং বিকেএমইএর সহসভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সময়সীমার মধ্যে কনটেইনার না সরালে কনটেইনারের ওপর ভাড়া আরোপের কঠোর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।