ঝিনাইদহ বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের খাবারে তাজা কর্মকর্তারা, সমাজসেবা অফিস যেন বিএনপির দ্বিতীয় অফিস

ওমর আলী সোহাগ : ঝিনাইদহ শহরের সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দিন কাটছে খাবারের কষ্টে। শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ঝিনাইদহের সচেতন মহল। শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের অর্থে ব্যপক চুরি ও অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোয়ার্টার দখল করে আছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা। ভালো খাবার টিফিন বাটিতে করে নিয়ে যান কর্মকর্তারা, কানে শোনার মেশিন বিক্রি হয় ফার্মেসিতে। ছাত্রছাত্রীরা জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এই প্রতিষ্ঠানে ২১ জন ছাত্র ও ১৮ ছাত্রী। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ ৩৫শত টাকা। গতকাল সোমবার সরেজমিনে যেয়ে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ৩৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য দুপুরের খাবারে দেওয়া হয়েছে ২০ডিম। দুপুর পৌনে ২ টার মধ্যে রান্না হয়নি শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার। কিন্তু রাতের খাবার হিসাবে রান্না হয়েছে বড় মাছের দোপেঁয়াজি। দুপুরে বাড়তি খাবার দেওয়ার কথা জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান লুটু। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ঘাষের বাগান। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে থাকেন মালি ইমান আলী। তিনি একাই কয়েক ব্রান্ডের সিগারেট-বিড়ি কক্ষের মধেই টানেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ৯ টি কানে শোনার মেশিন থাকার কথা জানালেন প্রধান শিক্ষক মোমিনুর রহমান। কিন্তু বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে ৩টির বেশি দেখাতে পারেনি। অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মেশিন টেকনিশিয়ান মসলেম উদ্দিন ফার্মেসিতে বিক্রি করেন। অন্য অফিসে যাওয়ার সময় কর্মকর্তারা বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার টিফিন ক্যারিয়ারে করে নিয়ে গেলেও এই বিদ্যালয়ে কর্মরতরা বিদ্যালয় থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে রাতের জন্য বাড়িতে নিয়ে যায়। চুক্তি ভিত্তিক ইশারা ভাষা প্রশিক্ষক বিষ্ণু কুমার পরিবার নিয়ে থাকছেন কোয়ার্টারে। তাদের নিজেদের খাবার রান্না করা লাগে না। পৌনে ২টার দিকে কারিগরী প্রশিক্ষক হেলেনা শবনমকে ভুড়িভোজ করতে দেখা যায়। প্রতিবন্ধি এই শিক্ষার্থীরা তাদের কষ্টের কথা কারো কাছে বলতে পারে না।
এই বিষয়ে ঝিনাইদহ শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোমিনুর রহমান জানান, ‘এখানে কোন অনিয়ম হয় না। খাবার তালিকার নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে চুয়াডাঙ্গা বাস স্টান্ডের ১০ তলা আবাসিক ভবনের অফিসে বেশির ভাগ সময় সাবেক ছাত্রদল নেতা মোমিনুর রহমানের বন্ধু ও জেলার সাবেক ছাত্রদল নেতাদের নিয়ে আড্ডা চালায়, সরকার বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের নকশা করা হয় এই অফিসে। জেলা বিএনপির নেতারাও এখানে সময় কাটান। মোমিনুর রহমান লুটু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা ছিলেন। এই অফিসের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,‘ বিএনপির রাজনৈতিক গোপন পরিকল্পনার অনেক মিটিং এখানে বসে করা হয়। কিছু আওয়ামী লীগ নেতার সাথেও মোমিনুর রহমানের সখ্যতা রয়েছে। পৌরসভায় মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে বয়ষ্কভাতা, প্রতিবন্ধী ও বিধবাভাতার টাকা অন্য নাম্বারে ঢুকে যাওয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা এই মোমিনুর রহমান। এই অফিসে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা কেন্দ্র ও আড্ডা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালক মোঃ মোমিনুর রহমান শেখ জানান,‘ এই বিষয়ে আমার জানা ছিল না আপনাদের মাধ্যমে অভিযোগ পেলাম। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেব।