দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মা আর শিকলে বাঁধা প্রতিবন্ধি পাগলের পাশে এমপি শিবলী সাদিক

মনোয়ার বাবু, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মা আর শিকলে বাঁধা প্রতিবন্ধি পাগল সন্তানকে নিয়ে বিপাকে অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়ালেন এমপি শিবলী সাদিক।

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার ৩ নং সিংড়া ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের সাতপাড়া গ্রামের স্বামীহারা আঃ মজিদের স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আমেনা খাতুন (৭৫)। ৩ সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেছে ও এক ছেলে লুৎফর(৪০) তাও আবার পাগল । প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য কোন প্রতিবন্ধি ভাতা না পেয়ে বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে এবয়সেও তাকে মানুষের কাছে হাত পেতে চালাতে হচ্ছিল তার সংসার।

এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আমেনা খাতুন ও তার শিকলে বাঁধা সন্তানকে নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল একই গ্রামের জৈনিক মাহাবুর রহমান হীরক সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার ছাপপুর মাধ্যমে শিকলে বাঁধা দুই পা এবং তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মাকে নিয়ে গ্রামের রাস্তায় চলার সময় এক ভিডিও প্রকাশ করলে তা দিনাজপুর -৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিকের দৃষ্টি গোচর হয় এবং এমপি শিবলী সাদিকের হৃদয়ে প্রচন্ড ভাবে নাড়া দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইঞ্জিনিয়ার ছাপপু কে নির্দেশ দেন পরিবার টির খোঁজ নিতে। এমপি শিবলী সাদিকের নির্দেশ মতে,পরেন দিন অর্থাৎ ঈদের দিন এ পরিবার টির হাতে তুলে দেন ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন সহ ইঞ্জিনিয়ার ছাপ্পু চাল, সব ধরনের কাচা বাজার,শুকনো খাবার, তেল, ডাল,সাবান,কাপড় ও নগত অর্থ। সেই সাথে পরিবারটির সারা জীবনের ব্যয় ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন এমপি শিবলী সাদিক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস তাদের।বেহাল নাজুক রাস্তাঘাট আর মোবাইল নেটওয়ার্ক বিহীন এক গ্রাম।আমেনা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে দেখাযায়,বাড়ির উঠনে মা এবং ছেলে একটা পাটির উপর শুয়ে আছে।আমাদের দেখা মাত্র দুই পা শিকলে বাধা লুৎফর লাফ দিয়ে এসে বলে, টেকা দে,টেকা দে খামো টেকা দে! সে সময় এমপি শিবলী সাদিকের দেওয়া খাবার ওসি আজিম উদ্দিন তাদের হাতে তুলে দিলে পাগল লুৎফর বলে,এমপি দিছে! এমপি দিছে! আইদে এলে চাল,এলে কাচা তরকারি, এলে সাপন,মার কাপড় হামার লুঙ্গী গেঞ্জি পেন- আইদে এলে টেকা বারংবার একই কথা বলতে থাকে।এসময় উপস্থিত অনেকেই লুৎফরের খুশি দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি আর তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মা সন্তানের খুশিতে বিলাপ করে কাঁদতে থাকে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আমেনা খাতুন বলেন,৩০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। স্বামীহারা এই সংসার নিয়ে অনেক দিন ধরে কষ্ট করে আসছি।এসময় আমেনা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন তার অপর দুই সন্তান বিয়ে করার কিছু দিন পরে মারা যায়।পরে লুৎফর কে বিয়ে দিলে সে তিন মেয়ে সন্তানের জনক হবার পর হঠাৎ পাগল হয়ে যায় এবং এলাকা ছেড়ে মাঝে মাঝে অন্যত্র চলে যেত। উপায়ান্ত না পেয়ে নারী ছেড়ে সন্তান কে হারানোর ভয়ে এক চোখ ইচ্ছা করে অন্ধ করে দেয়,তাতেও যখন কাজ হয়নি তখন তার দুই পায়ে শিকল পড়িয়ে দেয় যাতে করে হারিয়ে না যায়।তিনি আরও জানান, স্থানীয় জন প্রতিনিধির কাছে তার ছেলের প্রতিবন্ধি ভাতার আবেদন করেও এখনো পর্যন্ত তা মিলেনি। এসময় বৃদ্ধা আমেনা খাতুন তার পরিবারকে খাবারের ব্যবস্থা করে দেবার জন্য এমপি শিবলী সাদিক কে প্রাণ ভরে দোয়া করেন।

সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার ছাপপু বলেন,এমপি স্যার ভিডিও টি দেখার সাথে সাথে আমাকে নির্দেশ দেন এই মা এবং ছেলের কয়েক মাসের খাবার সহ নগত অর্থ দিয়ে আসার জন্য। স্যারের নির্দেশ মত আজ আমরা তাদের খাবার, কাপড়-চোপড় এবং নগত অর্থ দিয়ে গেলাম।তাদের সারা জীবনের ব্যয়ভার এমপি মহোদয় বহন করবেন বলেও এসময় জানিয়ে দেন তিনি।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন,স্যারের দেওয়া উপহার আমরা তাদের বাড়িতে এসে পৌছে দিয়ে গেলাম এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মা এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের জন্য একটি বাড়ি ও প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য এমপি স্যার সহ সংশ্লিষ্ট সকল কে বলে অতি দ্রুত ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।এসময় তিনি সমাজের বৃত্তবান লোকদের এ সকল পরিবারের পাশে এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেন।