নাগরপুরে অনেকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে, বেড়েছে বাল্য বিবাহ

তোফাজ্জল হোসেন তুহিন, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে করোনা মহামারিতে গত ১৭ মাসে আশংকাজনক হারে বেড়েছে বাল্য বিয়ের ঘটনা। দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক হলেও অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের পরিবারের মেয়েরাই বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এছাড়া স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় কদাচিৎ বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জ্যামিতিক হারে রেড়েছে এর সংখ্যা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে শুধু মাত্র বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে, এমন অভিযোগ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। এ উপজেলায় ২টি জুনিয়র সহ মোট ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে গড়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৭৫ শতাংশ। অনুপস্থিতির একটি অংশ স্বেচ্ছায় লেখা পড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। আরেকটি অংশ বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। সরেজমিন জরিপননেছা বালিকা স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছে। কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভিন আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ থাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মোট কত জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে তার সঠিক তথ্য নিরুপন না করায় জানানো সম্ভব হয়নি।

৪২ নং পংবাইজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মিয়া জানান, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশ ভাল। তবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় চলে গেছে। মামুদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মো. শওকত মিয়া জানান, সপ্তম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। বিবাহীত শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ব্যতিত সবাই শ্রেনী কক্ষে উপস্থিত আছে বলেও জানান ওই শিক্ষক। নাগরপুর শহীদ সামছুল হক পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রতি শ্রেনীতে গড়ে কমপক্ষে ৫জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। এছাড়া আলহাজ রমজান আলী উচ্চ বিদ্যালয়, আলোকদিয়া আবু সাইদ উচ্চ বিদ্যালয় সহ উপজেলা অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও একই চিত্র।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান মিঞা জানান, সবেমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এ মুহুর্তে ঝড়ে পড়া কিংবা বাল্য বিয়ের সঠিক তথ্য আমাদের হাতে নেই। তবে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি আছে বলে তিনি জানান।