পাইকগাছায় গো খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে খামারীরা

মনিরুল ইসলাম, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ পাইকগাছায় গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে খামারী বিপাকে পড়েছেন। যে ঘাসের আঁটি ১০ টাকা ছিল বর্তমানে সেটি এখন ২০ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। যে খড় ছিল প্রতি কেজি ৫/৬ টাকা সেটি এখন ২০/২৫ টাকা হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চ মূল্যে গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে কৃষক ও গো-খামারীরা হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে গো-খাদ্য সংকটের কারণে গরু-ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এনজিও ঋনের কিস্তি বা সুদের টাকার জন্য পাওনাদাররা বার বার তাগেদা দিচ্ছে। ফলে গরম্ন পালনকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে বা উদ্যোক্তাদের অভাব হচ্ছে।

সরেজমিনে পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃৃতিক দূর্যোগে এ অ লের মানুষের নিত্য সঙ্গী হলেও সকল বিপর্যয় কাঁটিয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে গরম্ন, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জাতীয় পশু পালন করে আসছে। সর্বশেষ আম্ফানে কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লবণ পানি ঢোকা, বন্যা, জলবদ্ধতা, মৎস্য লীজ ঘের ও তরমুজের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় গরুর চারণ ভূমির সংকটের কারণে গো-খাদ্যের সংকট দেখা যায়। আবার এদের একাংশসহ তালা অ লে জলাবদ্ধতায় আমন চাষ না হওয়া, পাইকগাছার উপজেলা দেলুটি, গড়ইখালীতে তরমুজ সহ বিভিন্ন শস্য আবাদের বেড়ে যাওয়ার ফলে চারণ ভূমি কমে যাওয়াতে গো-খামারীরা বিপাকে পড়েছে। মাঠে গরু, ছাগল, ভেড়া চরাতে পারে না। বাকী এলাকা লীজ ঘেরের কারনে সারা বছর পানি থাকে। পাইকগাছায় দেশী গরম্ন প্রায় ৪৭ হাজার ২শত ৭৫টি, শংকর জাত বা উন্নত জাতের ৩হাজার ৪শ ৫০টি, মহিষ ২শ উর্ধ্বে, ছাগল প্রায় ৩৫ হাজার এবং ভেড়া ২১হাজার রয়েছে বলে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান।

উল্লেখিত তথ্য হিসাবে এদের জন্য যে পরিমাণ চারণভূমি বা আশঁ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন তার ১০ শতাংশ নেই বললেই চলে। গরু পালনকারী কয়েকজন জানান, আমাদের সারা বছর গরুর দুধ, গোবর, বিক্রয় করে কোনো মতে সংসার চলে। এবছর গরুর খাদ্য সংকটের কারনে গরু, ছাগল নিয়ে বিপাকে আছি। কারও বাড়ি, ক্ষেতে, বাগানে গেলে বকুনি শুনতে হয়, কেউ খড়ে দিলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, অনেকে কোর্টে চালান দেন। খড় আগে কিনতাম ৫শ টাকায় সেই খড় এবার কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। এতে করে গরু ছাগল প্রতিপালন আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

কপিলমুনির রিপন গাজী জানান, আমার ১৮টি গরম্নর জন্য দিনে ৪/৫হাজার টাকা মত খরচ পড়ে। দানাদার খাবারের মূল্য উর্ধ্বমূখী এবং দুধের বাজার মূল্য কম হওয়ায় খামার টিকে রাখা সম্ভব হবে না। তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের নাছিমা বেগম জানান, গরম্নর কষ্ট চোখে দেখা যায় না, না খেতে পেরে কঙ্কালসার। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যšত্ম বিভিন্ন মাঠে, জমির আইল, বাগান থেকে ঘাস, লতাপাতা জোগাড় করতে হয়। ঠিকমত খাদ্য দিতে না পারায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। কেউ বিভিন্ন সমিতি এনজিও, যুব উন্নয়ন অফিস থেকে ঋণ করে, কেউ সোনা বন্ধক রেখে, চড়া সুদে ঋণের নিয়ে অধিক লাভের আশায় গরম্ন, ছাগল, ভেড়া পালন করছে।

এছাড়া তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের শহিদুল কাগজী বলেন গো খাদ্যের তীব্র সংকট অনেকের হাতে টাকা নেই। কেউ কেউ কচুরিপানা, লতাপাতা, তরকারির খোসা, বেঁচে ফেলে দেয়া শাক ও বাজারের ফেলে দেয়া তরিতরকারি কুড়িয়ে এনে খাওয়াচ্ছেন। এবছর গো-খাদ্যের সংকটের কারণে এসকল অ লের গো-খামারীরা চরম বিপাকে পড়ছে।

পাইকগাছা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিষ্ণুপদ বিশ্বাস জানান, ব্যাপক লবণাক্ততা, মৎস্য ঘের, তরমুজের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় গরম্নর চারণ ভূমি কমে যাচ্ছে। দানাদার খাবারের মূল্য উর্ধ্বমূখীর হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় আমরা উন্নত জাতের ঘাসের (নেপিয়ার, পাক চং) চাষে খামারীর উদ্বুদ্ধ করছি। দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাসের চাষ করলে খামারীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। গো-খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় দানাদার খাদ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপশি ঋণের সুদের হার কমানো এবং আর্থিক সহায়তা কমানো সহ প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খামারীগণ।