বাংলা ভাষা নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী তরুণদের মনোভাব

সোহেল মিয়া, কেরানীগঞ্জ: বাংলা ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। যা অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জন করা হয়েছে।  আমাদের এই ভাষা বর্তমানে আমাদের দ্বারাই বিভিন্নভাবে অবহেলিত হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারায় অন্য ভাষার প্রতি যতটুকু সম্মান রয়েছে তা বাংলা ভাষার প্রতি অনেকে দেয় না। আর এই ভাষা অর্জনের মাসে বাংলা ভাষাকে নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়িয়া শিক্ষার্থীদের মনোভাব। 
শাহীন হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ভাষার মর্যাদা অটুট থাকুক সর্বস্তরে
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী, বাঙ্গালির জাতীয় জিবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষাকে উপেক্ষা করে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারো সুর্যসন্তানের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বে বাঙ্গালীই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জিবনকে উৎসর্গ করেছে অকাতরে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলা ভাষা আজ হুমকির মুখে। রাষ্ট্র,সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ বিদেশি ভাষার মিশ্রণ ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। হিন্দি,ইংরেজির মিশ্রণ ছাড়াও সর্বস্তরে রয়েছে শুদ্ধতার অভাব। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী হোক  বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও শুদ্ধতা চর্চার একমাত্র অঙ্গীকার।
মহসিন হোসেন, ঢাকা কলেজ, অর্থনীতি বিভাগঃ২১ শে ফেব্রুয়ারি আান্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস।প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদের কথা মনে পড়ে যায়। বাংলার বীর সন্তান রফিক,শফিক,ছালাম, বরকত,জব্বারসহ অনেকে মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়েছেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।পৃথিবীতে আর কোনো ভাষার জন্য জীবন দিতে হয়নি।বাংলার সেই সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিসরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আান্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ভাষা শহীদের মহান আত্মত্যাগের কারনে আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি।ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষে  ভাষা শহীদের জন্য রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। এবারের স্লোগানঃ”তরুণ প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলন এর ইতিহাস তুলে ধর,দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ কর”। আর এই মহান ভাষাকে বর্তমানে বিভিন্ন ভাষার সাথে সংমিশ্রণ করে বাংলা ভাষার অবমাননা করা হয়।
সুমাইয়া আাক্তার, বাঙলা কলেজঃ ফেব্রুয়ারি মাস ভাষায় মাস।১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বে মাতৃভাষার জন্য নির্ভয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ দেওয়ার প্রথম ইতিহাস সৃষ্টি হয়।বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে এদেশের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা পেয়েছিল রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি। এরপর থেকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল হতে বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে একযোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বর্তমানে ১৯৩ টি দেশে ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা বিশেষ মর্যাদা লাভ করলেও বর্তমানে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের আচরণ বিমাতাসুলভ। মর্যাদার দিক থেকে সর্বক্ষেএে বাংলা ভাষা চালুর যে জাতীয় অঙ্গিকারটি প্রায়ই উচ্চারিত হয় তার সাথে বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের কোন মিল নেই।শিক্ষিত তরুন সমাজের কাছে আজ বাংলা ভাষার গুরুত্ব নেই।কারন তাদের চিন্তাধারা ও দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী  কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাংলা নয় ইংরেজি ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন।এর মূলে রয়েছে মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অনাদর। কেননা আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেএে ইংরেজির প্রাধান্য শুরু আমাদের নয় বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু তার ফলে বিশ্বের কোন দেশের মানুষের কাছে নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব বা মর্যাদা কমে নি।এদেশের  নতুন প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষার সমাদর কম হওয়ার আরেকটি কারণ জাতীয় জীবনে সর্বএ বাংলা ভাষা ব্যবহার না করা । মাতৃভাষার  মর্যাদা রক্ষার জন্য স্বাধীনতার পর জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেএে বাংলা ভাষা ব্যবহার বাড়ানোর যেসব পরিকল্পনা সূচিত হয়েছিল যা পরে বাস্তবায়িত হয় নি তা বাস্তবায়ন করা। এজন্য সরকারি বেসরকারি সকল অফিস আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ দেশীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের সকল কাজ সম্পাদন ও নামফলকও বাংলায় লেখা শুরু হোক।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পযন্ত সব স্তরে বাংলা ভাষা শিক্ষার গুনগত মান বাড়ানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এসব চিন্তাভাবনা ভাষায় মাসেই শুরু হোক।
মোবারক হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বাঙালির অহংকার, গৌরব,আত্মত্যাগ ও চেতনার মাস ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলার সাহসী দামাল ছেলেরা নিজের তাজা রক্ত দিয়ে তাদের মায়ের ভাষাকে রক্ষা করে। যাদের আত্মত্যাগে রক্ষা পায় “বাংলা” ভাষা  বাঙালি জাতি তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে ও ভালোবাসা জানাবে। 
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ) বৃহস্পতিবার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ” স্লোগান চলাকালে পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার, বরকত সহ অনেকেই  নিজেদের জীবনকে আত্মত্যাগ করেন। এই আত্মত্যাগ পরবর্তী সকল আন্দোলনে বাঙালির অনুপ্রেরণা  হিসেবে কাজ করে। ভাষার জন্য বাঙালির এই আত্মত্যাগ আন্তজার্তিক স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে দিনটি বিশ্ব পরিমন্ডলে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে পালন হয়ে আসছে। একুশের সবচেয়ে বড় কার্যক্রম হচ্ছে  বইমেলা । কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্প অপণ করা হয়।  শত গৌরব ও অহংকারের মাঝে  শোকের ছায়া নেমে আসে বাঙালি জাতির নিকট। এ মাসে নতুন প্রজন্ম তাদের জাতির শত বছরের  ইতিহাস জানার সুযোগ পায়। বাঙালি চেতনাবোধ জাগ্রত করতে সহযোগীতা করে।