বাঙালির চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীঃ ‘মা’ শব্দটি যতটা মধুর, আবেগময়। মাতৃভাষা ও ঠিক তেমনি আমাদের আবেগ অনুভূতির আশ্রয়কেন্দ্র। শিশু জন্মের পর তার নিজের অজান্তেই আয়ত্ত করে নেয় এই মধুর বুলি তাই এর সংযোগ আমাদের আত্মার সাথে, অস্তিত্বের সাথে। নিজের অজান্তেই রপ্ত করে ফেলা অনুভূতির আশ্রয়কেন্দ্রে আঘাত মেনে নেয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাইতো বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল অস্তিত্বের অধিকার বাংলা ভাষার সম্মান।

ভাষা শব্দটি আক্ষরিক বিবেচনায় ছোট একটি শব্দ হলেও এর তাৎপর্য অমূল্য আর একুশের আত্মত্যাগের মহানুভবতায় বাঙালির ক্ষেত্রে সেটি আরও ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, এর সাথে জড়িত আছে আবেগ, অনুভূতি, সংগ্রাম। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালির বাংলা ভাষাকে উপেক্ষিত করা হলে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঝাপিয়ে পড়ে রফিক, শফিক সহ আরো নাম না জানা ভাইয়েরা। প্রথমবারের মতো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় ভাষার সম্মান। তাই একুশ আামাদের বাঙালির চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক।

ভাষা মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম, একটি সমাজের ঐতিহ্যের বাহক। আর সেই ভাষাই যদি অবহেলিত হয়, সেই ভাষাকেই যদি ছিনিয়ে আনতে হয় তাহলে এরচেয়ে বড় আত্মত্যাগ দ্বিতীয়টি হতে পারেনা। সে কথা বিবেচনা করে ১৯৯৯ সালে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, ২০১০ সালে জাতিসঙ্গের সাধারণ পরিষদ ‘এখন’ থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হবে’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বাংলা পায় বিশ্বব্যাপী পরিচিতি, অম্লান হয়ে ওঠে বাঙালির আত্মত্যাগ।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন বলি দেওয়া হলেও বাংলা ভাষা আজও পায়নি তার প্রাপ্য সম্মান, কারণ বাংলা ভাষা এখনও সমাদৃত হতে পারেনি প্রতিটি ক্ষেত্রে। অর্জনের চেয়ে যেমন রক্ষা করা কঠিন তেমনি ভাষাকে ছিনিয়ে আনতে পারলেও আমরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারিনি। এর পেছনে বহু কারণ বিদ্যমান থাকলেও অন্যতম একটি হল তরুণ সমাজের অনীহা। সেদিনের তরুণেরা চেতনার টানে উজ্জীবিত হলেও আজকের তরুণ সমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হয়ে বাংলার থেকে অন্য ভাষার ব্যবহারকে আধুনিকতার অংশ হিসেবে নিচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত বিকৃত হচ্ছে বাংলা। অস্তিত্বের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।

প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই সকলের প্রাণে স্পন্দন আসে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য। কিন্তু এই সম্মান শুধু বাহ্যিকভাবে প্রদর্শন না করে আত্মিক অনুভবের জাগরণ ঘটাতে হবে। এই চেতনা শুধু ভাষার মাসেই ধারণ করলে চলবেনা। মনে-প্রাণে লালন পালন করতে হবে। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে সচেষ্ট থাকতে হবে, বাংলা ভাষাকে বিকৃত হওয়া থেকে বাচাঁতে হবে। তাহলেই পরিতৃপ্ত হবে শহীদেরা, ব্যর্থ হবেনা তাঁদের আত্মত্যাগ। বাংলা ভাষা পাবে প্রাপ্য সম্মান।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়