বিশ্বকাপ মিশন হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্কঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে কোণঠাসা করেও বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪১। ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারানো স্কটিশদের চূড়ান্ত স্কোর ঠেকে ১৪০ এ। লক্ষ্য সাদামাটা হলেও দুই টাইগার ওপেনার সৌম্য-লিটন শুরুটা মেঘে ডাকা অন্ধকারে পরিণত করেন। তবে মাঝপথে সাকিব-মুশফিকের দায়িত্বশীল ব্যাটিং এবং শেষে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফের আত্মবিশ্বাসী মনোভাব হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশকে। অর্থাৎ স্কটল্যান্ডের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

কন্ডিশন-পজিশন-প্রতিপক্ষ; সবই বদলেছে। কেবল বদলাননি সৌম্য। আর তার উইকেট বিলিয়ে মাথানিচু করে সাজঘরে ফেরার দৃশ্য। লিটনের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শুরুতেই সাজঘরে ফিরেন তিনি। ফলে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ড্যাভেকে মিডউইকেটে তুলে মারতে গিয়ে তালুবন্দী হন বাঁহাতি এই ব্যাটার, ৫ বলে করেন ৫ রান। একই দৃশ পুনারাবৃত্তি করেন লিটন। তিনি খেলেন ৭ বলে ৫ রানের ইনিংস। হোয়েল স্লোয়ার বুঝতে না পেরে মিডঅফে ক্যাচ আউট হন লিটন।

সৌম্য-লিটন বিদায়ের পর বাংলাদেশের হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সাকিব ও মুশফিক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা দু’জনে মিলে যোগ করেন ৪৭ রান। তবে গ্রিভসের বলে তুলে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্যাচ আউট হয়েছেন থিতু হওয়া সাকিব। গ্রিভসের বলে ফেরার আগে ২৮ বলে ২০ রান করেন তিনি। তারপর ঠিকই আরো কিছুক্ষণ লড়ে যান মুশফিকুর রহিম। তবে তার যাত্রাটা থামে ৩৮ রানে। স্কুপ খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। এরপর মাঠে নেমে দুটি বাউন্ডারির পর দলকে টেনে তোলার চেয়ে বিপদে ফেলেন আফিফ। ব্যক্তিগত মাত্র ১২ রান করেই সাজঘরে ফিরেন তিনি। আফিফের দেখানো পথে ফিরেন সোহানও। জাতীয় দলের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান তিন বল নষ্ট করে দিয়ে যান কোনো রান না করেই। আর সর্বশেষ দলের পরাজয়ের শেষ পেরেক ঢুকেন ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ নিজেই। যেখানে শেষ মুহুর্তে স্নায়ুচাপে ঠান্ডা মাথায় জয় তোলার কথা, সেখানে দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়। ব্যক্তিগত ২৩ রানে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরেন তিনি। আর সবশেষ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ রান দূরে থেকে থামে বাংলাদেশের যাত্রা।

এর আগে মেহেদি-সাকিব-মোস্তাফিজদের তোপে ৯ উইকেটে ১৪০ রানেই থামে স্কটল্যান্ড। আল আমেরাতে টস জিতে স্কটল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশি বোলাররা অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেন শুরু থেকেই।

এদিন তাসকিন আহমেদকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ওভারে তাসকিন দেন ৪ রান। মোস্তাফিজুর রহমান পরের ওভারে আরও মিতব্যয়ী, খরচ করেন মাত্র ১ রান। তৃতীয় ওভারে আবারো বোলার বদল। এবার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে আক্রমণে আনেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম তিন বল ডট দিয়ে চতুর্থ বলেই সাফল্য পান সাইফউদ্দিন। টাইগার পেসার পরিষ্কার বোল্ড করেছেন কাইল কোয়েতজারকে (৭ বলে ০)।

ক্রস খেলতে গিয়েই আউট হয়েছেন ম্যাথিউ ক্রস। ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে শেখ মাহেদি হাসান এলবিডব্লিউ করেছেন তাকে। এর তিন বল পর তিনি বোল্ড করেছেন ভয়ংকর জর্জ মুনসেকেও (২৩ বলে ২৯)। ক্যাচ মিসে যেমন ম্যাচ মিস হয়, তেমন একটি ক্যাচ ম্যাচ ঘুরিয়েও দিতে পারে। আফিফ হোসেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নজর কাড়লেন দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে।

সাকিব আল হাসানকে স্কটিশ ব্যাটসম্যান স্কট বেরিংটন (৫ বলে ২) যেভাবে হাঁকিয়েছিলেন, তাতে বলটি ছক্কাই হতে পারতো। কিন্তু দারুণভাবে বাউন্ডারিতে সেটে ধরে ফেলেন আফিফ। পরে ভারসাম্য রাখতে না পেরে বল ওপরে তুলে চলে যান বাউন্ডারির বাইরে। সেখান থেকে এসে আবার দারুণভাবে লুফে নেন ক্যাচটি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে জোড়া আঘাত হেনেছিলেন মেহেদি হাসান। সাকিব একাদশতম ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন। বেরিংটনের পর তাকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে লিটন দাসের ক্যাচ হন মাইকেল লিস্ক (০)। পরের ওভারে আবার মেহেদি। এবার তাকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড কলাম ম্যাকলিওড (৫)। ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড।

সেখান থেকে মার্ক ওয়াট আর ক্রিস গিভসের প্রতিরোধ। টি-টোয়েন্টি মেজাজেই ব্যাটিং করেছেন দুজন। ৩৪ বলের জুটিতে যোগ করেন ৫১ রান। শেষ পর্যন্ত ১৮তম ওভারে এসে সেই জুটি ভেঙেছেন তাসকিন। ১৭ বলে ২২ করা ওয়াট বাউন্ডারিতে হয়েছেন সৌম্য সরকারের ক্যাচ।

তবে গ্রিভস ঠিকই মারকুটে ব্যাটিং করেছেন। ২৭ বলেই তিনি করেন ৪৫ রান। শেষ ওভারে এসে এই ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, বাউন্ডারিতে সাকিব নিয়েছেন ক্যাচ। পরের বলে আরও এক উইকেট কাটার মাস্টারের, বোল্ড করেছেন জশ ড্যাভেকে (৮)। তবে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেও তা হয়নি।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন শেখ মেহেদি। ১৯ রানে ৩টি উইকেট নেন এই অফস্পিনার। ১৭ রানে সাকিবের শিকার ২ উইকেট। মোস্তাফিজ ২ উইকেট নিয়েছেন ৩২ রান খরচায়। একটি করে উইকেট শিকার তাসকিন আর সাইফউদ্দিনের।