বেওয়ারিশ ঋণে খাদের কিনারে মান্নান

নিজস্ব প্রতিবেদক
বেশকিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকরা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এজন্য নামে-বেনামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে বেওয়ারিশ ঋণ। যা পরবর্তীতে আর ফেরত আসছে না। শেষমেশ প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। এমন পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। যাদের মোট বিতরণ করা ঋণের বেশির ভাগই ‘মন্দ ঋণ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারও কারও ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা এ খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশ
খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা এ খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশ।

দেশে এখন ব্যাংকবহির্ভূত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মার্চ শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে বিআইএফসি। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপ।

খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেউলিয়ার পথে থাকা বিআইএফসির বিতরণ করা ৮১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ৭৭২ কোটি তিন লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৯৫ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ৭৭০ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য ঋণ। এগুলোর বেশির ভাগই নামে-বেনামে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপ। সম্প্রতি অনিয়মের অভিযোগে আদালতের নির্দেশনায় গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটি মেজর মান্নান ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

বিআইএফসির বিতরণ করা ৮১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ৭৭২ কোটি তিন লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৯৫ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ৭৭০ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য ঋণ। এগুলোর বেশির ভাগই নামে-বেনামে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপ
অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইএফসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম আশফাকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘৯৫ শতাংশ খেলাপি ঋণই দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আদালত বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। তারা ঋণ আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সেই আলোকে আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মেজর মান্নানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার মতো ঋণ রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই খেলাপি। এসব ঋণ আদায়ে তার নামে ২৭টি মামলা হয়েছে। যার অধিকাংশের ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এছাড়া প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতার স‌ঙ্গে পর্ষদ সদস্যদের একটা যোগসাজশ রয়েছে। তা না হ‌লে এত খেলা‌পি হ‌বে কেন? এ ঋণ আদায়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কঠোর মনিটরিং থাকা দরকার। এখানে যদি প্র‌তিষ্ঠা‌নের উদ্যোক্তা প‌রিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ অনিয়‌ম করেন তাহলে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এটির দা‌য়িত্ব তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।’