মেহেরপুরে কৃষিখাতে অংশগ্রহন বাড়ছে নারীদের

মেহেরপুর প্রতিনিধি :
আদি পেশা হিসেবে কৃষির সুচনা হয়েছিল নারীর হাত ধরেই। সংসারের কাজের পাশাপাশি কৃষিতেও বেশ অংশগ্রহণ বাড়ছে মেহেরপুরের নারীদের। বর্তমানে আধুনিক কৃষি খাতে প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছে নারীরা। তারা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবিশস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্য চাষ, বনায়ন এসব কাজে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছে। শ্রমিক হিসেবেও দিন দিন চাহিদা বাড়ছে নারীদের। কচু তোলা, পেয়াজ সংগ্রহ, বীজ বাছাই, তামাক চাষ, বিভিন্ন খামারে বেশ সক্রিয় অংশ গ্রহণ করছেন মেহেরপুরের নারীরা।

মেহেরপুরে প্রায় সাত লাখ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ও উদ্যোক্তা হিসেবে কিছু নারী কাজ করলেও বেশিরভাগই সংসার সামলানোর কাজ করে থাকে। তবে জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, সংসারের উন্নয়ন সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির কারনে কৃষিতেও তাদের অংশ গ্রহণ বাড়ছে বলে জানান অনেকেই।

কচুতোলার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসা তহমিনা খাতুন বলেন, পুরুষদের পাশাপাশি আমাদের কাজের সুযোগ হয়েছে। এখান থেকে আমরা বাড়তি ইনকাম করতে পারছি। যা সংসারের উন্নতিতে খরচ করতে পারছি।

জাহেরা, সমিরণ, আয়শা নামের আরও কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, আগে নারীদের কৃষিকাজ করাটা মানুষ ভালোভাবে দেখতো না। সমাজে আমাদেরকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হতো। কিন্তু এখন আমাদের সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও সমানতালে কাজ করতে পারছি। তবে মজুরি আমরা সমানভাবে পাচ্ছি না। এটাই আমাদের আফসোস।

সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের খদেজা এগ্রো ফার্মের মালিক খদেজা খাতুন বলেন, আমার ফার্মে বর্তমানে তিনজন নারী কাজ করে। আমি নিজেও একজন নারী। লেয়ার মুরগী, গরু ও ছাগল পালন করছি। নিজের আয়ের পাশাপাশি এলাকার নারীরাও ফার্মে কাজ করে বাড়তি টাকা আয় করতে পারছে।
মেহেরপুর মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান সেলিম জানান, মেহেরপুরে কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োজিত রয়েছেন কৃষি কাজে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এ উপস্থিতির হিসাব নেই। তবে আমাদের জরিপ অনুযায়ী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মেহেরপুরের প্রায় দেড় লাখ নারী কৃষিকাজের সাথে জড়িত। কেউ উদ্যোক্তা হিসেবে আবার কেউ শ্রমিক হিসেবে। কয়েক বছর আগেও কৃষিকাজে নারীদের তেমন একটা অংশ ছিলনা। তবে সময়ের সাথে সাথে মেহেরপুরের নারীদের কৃষিকাজে অংশগ্রহণ বাড়ছে।

সেলিম আরও জানান, কৃষি কাজে জড়িত বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিকের নায্য ম‚ল্যায়নও করা হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেওয়া হয়।
মেহেরপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলা হাফিয়া জানান, শুধু কৃষিখাতে না, প্রায় প্রতিটি আয়বর্ধক কাজেই নারীর অংশ গ্রহণ বাড়ছে। মেহেরপুর যেহেতু কৃষিনির্ভর জেলা, সেহেতু কৃষিখাতে তাদের অংশ গ্রহণ বেশি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার চায়না পারভিন জানান, কয়েক বছর আগেও মেহেরপুরের নারীদের কৃষিকাজে তেমন একটা অংশ গ্রহণ ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে অনেক নারী কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ সফল। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌসী রুনা, রাধাকান্তপুরে খদেজা খাতুনসহ অনেকেই বেশ সফল। তাদের দেখাদেখি সংসারের কাজের পাশাপাশি পারিবারিক খামার তৈরিতেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অনেক নারী।