যতদিন বেঁচে আছি, মানুষের জন্য কাজ করে যাব

জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী
দ্রব্যমূল্য ও মেগা প্রকল্প নেই বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে
দেশে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই
ঋণ যেন বোঝা না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে
আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই , আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার

তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, যতদিন বেঁচে আছি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে কাজ করার সামর্থ দিবেন, ততদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাব, জনগণের সেবা করে যাব। দ্রব্যমূল্য ও সরকারের মেগা প্রকল্প নিয়ে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে চালসহ কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্বুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসা।
পহেলা বৈশাখ-১৪২৯ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২০২২ ও ২০২৩ হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলকের বছর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কয়েক মাস পরেই চালূ হতে যাচ্ছে বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু। এই সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ বছরেরই শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্টোরেল চালু হবে। আশা করা যায়, মেট্টোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর আমরা দেশি-বিদেশি ঋণ নিচ্ছি। তবে তা যাতে বোঝা হয়ে না উঠে সে দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে ১৫ মিনিটের দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানান। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ সরাসরি প্রচার করেন।

সরকার চুপচাপ বসে নেই :
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে একটি মহলের বিভ্রান্ত ছড়ানো সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বিশ^বাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ¦ালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহণেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।

দেশে পণ্যের কোন ঘাটতে নেই : কিছু কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রচারণার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষস্থা বিরাজ করছে! আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে, দেশে চাল-সহ কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবি’র দোকানে মানুষ ভিড় করবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?

মেগাপ্রকল্প নিয়েও অনেকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে : দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, আমাদের মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে-কোন ঋণ নেওয়া হয়নি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি। আর শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল :
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এক বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এই মহামারি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বাংলা নববর্ষ এখনও স্ব-মহিমায় টিকে আছে ॥
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাগতিক নিয়মের পথ-পরিক্রমায় বছর শেষে আমাদের মধ্যে আবার এসেছে নতুন বছর- ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। সবাইকে নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। আর মুসলমানদের সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজান মাস চলছে এখন। আমি সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

সারাবিশ্বে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সেতুবন্ধ ॥

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সকল সঙ্কীর্ণতা, কুপমন্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
তিনি বলেন, আজ শুধু দেশে নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি তাঁর বসবাস গড়ে তুলেছেন, সেখানেই বাঙালি’র হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁরা জানান দেন তাঁরা বাঙালি। আর এর মাধ্যমেই পৃথিবী জুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধ।