শ্রীনগরে আড়িয়ালবিলে মাটি সিন্ডিকেটের কোটি টাকার বাণিজ্য!

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: আড়িয়ালবিলের মাটি কেটে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে মাটি সিন্ডিকেট মহল। মাটি খোর সিন্ডিকেটটি নানা কৌশলে বির্স্তীণ আড়িয়ালবিলের বিভিন্ন পয়েন্টে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। বিলের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় সমান (টিলা) উঁচু করে এসব মাটি কেটে মজুদ করতে দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ালবিল এলাকার বাড়ৈখালী ও মদনখালী এলাকা জুড়ে এমনটাই লক্ষ্য করা গেছে। বর্ষার সিজনে বিলে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে এবস মাটি বাল্কহেড কিংবা ট্রলারে করে হরিলুট করার অপেক্ষায় আছে মাটি সিন্ডিকেটটি। উপজেলার মদনখালীর চ ল, সারিং, রুদ্রপাড়ার মোরর্শেদ, মরন শেখ, কাঠালবাড়ির হারুন, আনিছ, ইদ্রিস, দেলোয়ার, জাবেদ, ইয়াকুব, মোস্তাক, রশিদ, ইমান, হাফেজ, ইয়ানুছ, আমির, হুমায়ুনসহ ২৫/৩০ জনের একটি মাটি সিন্ডিকেট আড়িয়ালবিলে বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য কৃষি জমির মাটি কেটে আলাদা আলাদাভাবে স্তুপ করে রাখছে। এছাড়া যত্রতত্র কৃষি জমি এভাবে কেটার কারণে পাশের আবাদি জমিগুলো এখন হুমকির মুখে পরছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ৈখালী এলাকার মদনখালীর দিকে ভেকু দিয়ে কৃষি জমি কাটা হচ্ছে। এসব জমির মাটি পাহাড় সমান স্তুপ করা হচ্ছে। বিলের দিকে তাকালে এমন অসংখ্য মাটির টিলার দৃশ্য চোখে পরবে। দেখা গেছে, নিরব বিলের একটি স্থানে ভেকু দিয়ে কয়েকজন শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছেন। লক্ষ্য করা যায়, মাটি কেটে নেওয়ার কারণে কৃষি জমিগুলো পুকুর বা ডাঙ্গায় পরিণত হচ্ছে। এসময় কাজে ব্যস্ত দুই ব্যক্তি ছবি তুলতে দেখে ভেকু বন্ধ করে সটকে পরার চেষ্টা করেন। ওই দুই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ভেকুর চালক হিসেবে মালিকের কাজ করতে প্রায় ১ মাস যাবৎ এখানে এসেছেন তারা। কার জমি, কে কাটছেন এবিষয়ে তারা কিছুই জানাতে পারেননি। ভেকুর মালিক তাদের এখানে কাজের জন্য পাঠিয়েছেন তাই এখানে কাজ করছেন এমনটাই জানান তারা।

Displaying 20210224_135112.jpg

স্থানীয় কৃষক সুমন, সবুজ, আলমগীরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা রহস্যজনক কারণে মুখ খুলতে চাননি। অপর একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আড়িয়ালবিলের মাটি লুটে সিন্ডিকেটটি সক্রিয়। দুই একটি জমির মালিককে হাত করে মাটি কিনার নাম করে বিলের অসংখ্য খাস জমির মাটি তারা কৌশলে কেটে নেয়। এসব মাটি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে সিন্ডিকেটটি। এছাড়াও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মহলের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভূক্তভোগী কৃষক জানায়, গভীরভাবে মাটি কেটে নেয়ার কারণে তাদের আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাষ করা বোরো ধানের জমি নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় পরেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিলে যত্রতত্র ভেকেু দিয়ে এভাবে মাটি কাটায় পার্শ্ববর্তী তাদের জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধভাবে এসব জমির মাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

মদনখালীর চ লের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিজের জমি কেটে ডাঙ্গা বানাচ্ছি। জমি কাটার বিষয়ে তিনি কোন পারমিশন নেননি। বিলে তার কাটা মাটির কোন স্তুপ নেই বলেন তিনি। কাঠালবাড়ির হারুনের কাছে জানতে চাইলে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে প্রথমে স্বীকার করলেও পরক্ষণেই তিনি বলেন, এবছর বিলে তিনি এখনো মাটি কাটা শুরু করেননি। রুদ্রপাড়ার মরন শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উত্তর বিলে মাটি কাটার কাজে তার একটি ভেকু আছে। মাটি ব্যবসায় তার দলে তিনিসহ মোট ৫ জন। কৃষি জমির মাটি কিভাবে কাটা হচ্ছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির মালিকদের সাথে চুক্তিপত্র করে মাটি কেটে স্তুপ করছেন তিনি। বর্ষায় প্রতি ট্রলার মাটি ৮/১০ হাজার টাকায় বিক্রি করবেন জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার জানান, বিষয়টি আমি অবগত নই। কৃষি জমি কোনভাবেই নষ্ট করা যাবেনা। আমি এসিল্যান্ডকে জানাচ্ছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।