সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার কেন?

আলী কদর পলাশ, সম্পাদক ও প্রকাশক – দৈনিক এই আমার দেশ

আলী কদর পলাশ

সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তোলপাড়। সাংবাদিকরা মামুনুলদের খবর হরহামেশাই প্রকাশ করছে কিন্তু বসুন্ধরার এমডির খবর নেই। মুনিয়ার খবর নেই। মেয়েটি কি আত্মহত্যা করলো নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে? এরইমধ্যে আলোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছে আদালতের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বুসন্ধরার এমডি আনভীরের সপরিবারে দেশত্যাগ।

গত ২৬ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের এক ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় এক কলেজ পড়ুয়া তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে আসামী করা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সায়েম সোবহান আনভীরকে।

অন্যদিকে, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ২৭ মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের করা আবেদন মঞ্জুর করেন। আবেদনটি করেছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসান।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী তদন্ত শুরু করেছেন। ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ অভিযোগে মামলা হলেও এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো ঘটনা আছে সেটাও খতিয়ে দেখছেন।

তাহলে বিশ্লেষণ করলে ঘটনা পরিস্কার আইন তার গতিতে চলছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার কেন? উত্তরে সহজ ভাবে বলা যায়, বসুন্ধরা শিল্পগোষ্টি বাংলাদেশের একাধিক মিডিয়ার মালিক। তাদের মালিকানাধীনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ এবং দ্য সান- এই তিনটি দৈনিক পত্রিকা। অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর। এছাড়া এই গ্রুপের রয়েছে নিউজ টোয়েন্টিফোর নামের টিভি চ্যানেল এবং ক্যাপিটাল এফএম নামের রেডিও স্টেশন। অবশ্য বিভিন্ন মিডিয়াতে রয়েছে তাদের বিজ্ঞাপনের প্রভাব। এতটুকু প্রভাব থাকতেই পারে। কেননা মিডিয়ার আয়ের বড় উৎস বিজ্ঞাপন। কিন্তু বাংলাদেশে কি আর মিডিয়া হাউজ নেই। সাংবাদিকরা কি সকলেই বসুন্ধরা গ্রুপে সংশ্লিষ্ট। মোটেই না।

বসুন্ধরার এমডি যে সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এ খবরটিতো প্রকাশ করেছে সাংবাদিকরাই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাহসিকতার সঙ্গে এ খবরটি প্রকাশ করেছে। সাংবাদিকরাই প্রকাশ করেছে ওয়াটারগেট কেলেংকারি, সাংবাদিকরাই প্রকাশ করেছে পানাম পেপার্স কেলেংকারী। যুগে যুগে এভাবেই সাংবাদিকরাই সত্য প্রকাশ করেছে, করছে এবং করবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, স্যোশাল মিডিয়াতে আমরা যে কোন কিছু লিখে দিতে পারি কিন্তু একজন সাংবাদিক সেটা পারেন না। কিছু পেশা থাকে যা আর দশটা পেশা থেকে আলাদা। অর্থাৎ সেসব পেশার মানুষকে বাকিদের থেকে বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়, নতুবা ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। সাংবাদিকের ছোট্ট একটি ভুল তথ্যের কারণে পুরো একটি দেশের ভেতর তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যেতে পারে। আবার তথ্যটি যদি ভুল নাও হয়, শুধু সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হয়, এতেও একই রকম সমস্যা হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট প্রকাশিত খবরের জন্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক এবং ওই সংবাদমাধ্যম দায়বদ্ধ থাকে। অর্থাৎ পরবর্তীতে খবরটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে বা প্রকাশের ফলে কোনো ক্ষতিকর কিছু ঘটলে তাকে দায়ী থাকতে হয়। ফলে এখানে একটা দায়িত্বশীলতা রক্ষার চেষ্টা সংবাদমাধ্যমগুলো করে থাকে। সেই দায়িত্বশীলতার কারণেই একটি খবর আপনার মনের মতো নাও হতে পারে।

সাংবাদিকের কলম, তরোয়ালের চেয়েও শক্তশালি। ফরাসি বিপ্লব এসেছিল রুসো, ভলতেয়ার, মঁতেস্কু-র কলমে। সাংবাদিক এমিল জ়োলা আলফ্রেড ড্রেফুসে-র প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে একাই ফরাসি সরকারকে টলিয়ে দিয়েছিলেন । ভারতের স্বাধীনতা বন্দুকের জোরে আসেনি, এসেছিল বহু চিন্তাবিদের লেখার জোরে। মাও জে দং-এর রেড বুক নানা দেশে বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করেছে। আর আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সাংবাদিকদের অবদান সর্বজনবিদিত, ভিক্টর হুগো তাই বলেছেন, সাংবাদিকদের চিন্তাভাবনা যে কালের স্রোত তৈরি করে, বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীরও তা ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা নেই।

[তরোয়াল বানানটি সজ্ঞানে লেখা হয়েছে। এখানে হুড়োহুড়ির দরকার নেই। এটি প্রমিত বাংলা। যেমন ঈদ থেকে ইদ।]

লেখকঃ দৈনিক এই আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আলী কদর পলাশ।