সালেহা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জোরপূর্বক রিজাইন লেটারে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

ওমর আলী সোহাগ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের সদর উপজেলার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন- সালেহা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ ও কর্মচারীকে জোরপূর্বক রিজাইন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর এই বিদ্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী ছবেদা খাতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, ২০২০ সালের ১৯ জুলাই স্কুল ছুটির দিনে স্কুলে ডেকে অনেক লোকের উপস্থিতিতে জোরপূর্বক রিজাইন লেটারে স্বাক্ষর করিয়ে নেন মোঃ আজম আলী সহ ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন,প্রধান শিক্ষক রনি আক্তার,ছবেদা খাতুনের স্বামী রওশন আলীসহ অন্যান্য সদস্যরা। এসময় ছবেদা খাতুনকে চেয়ার থেকে আছড়িয়ে ফেলে অন্যের লেখা রিজাইন লেটারে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনি আক্তার জানান, ছবেদা খাতুন স্বজ্ঞানে রিজাইন লেটারে স্বাক্ষর করেন। ছবেদা খাতুন ও এই স্কুলের সাবেক লাইব্রেরিয়ান মাফিদুল ইসলামের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সেটা জানাজানি হলে ছবেদা খাতুনের স্বামী রওশন আলী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগোরের ভিত্তিতেই মিটিং হয়েছিল। এই মিটিংয়ের এক পরিস্থিতি তিনি রিজাইন দেন। বর্তমানে সকল শিক্ষক কর্মচারীরা বিনা বেতনে বেগার দিচ্ছি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ৯ নং পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজম আলী জানান, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক(লাইব্রেরিয়ান) মাফিদুল ইসলামের সাথে বাইরে বেড়াতে গিয়ে ধরা পড়ে ছবেদা খাতুন। তার স্বামী নিজেই ধরে। তার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই বিষয়ে মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে ছবেদা খাতুন নিজেই রিজাইন দেয়।আপনি স্কুলে এসে ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের কাছে শুনে দেখেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন,তিনি অসুস্থ ঢাকায় আছেন। নিয়োগ নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে কোর্টে মামলা করতে বলেন। আমি কবে থেকে সভাপতি,ছবেদা খাতুনের কিভাবে রিজাইন দেওয়া হয়েছিল আমি আপনার কাছে বলতে বাধ্য নই। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩২৪ জন ছাত্রছাত্রী। সরকারিভাবে পাঠদানের অনুমতি পেলেও পুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশনে পরীক্ষা দেয় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন ১১ জন। যাদের মধ্যে ৪ জন স্থায়ী শিক্ষক,৪ জন খন্ডকালীন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী। ছবেদা খাতুন সাংবাদিকদের কাছে এই বিদ্যালয়ের ৬টি নিয়োগ পত্র দিয়েছেন। যা ম্যানেজিং কমিটি দিয়েছে। পত্র-পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই, শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম না মেনেই সম্পন্ন করা হয়েছে এই নিয়োগ প্রকৃয়া। বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ৯ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত। জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাসলিমা খাতুন জানান,এই স্কুলের এই সমস্ত নিয়োগ কোন কাজেই আসবে না। বোর্ডের নিয়মানুযায়ী না হলে বিদ্যালয়টি এমপিও পাবে না। তারা নিয়ম নীতির আলোকে পরিচালিত না হলে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ছবেদা খাতুনের দাবি,মোঃ আজম আলী মেম্বার শুধু তাকে চাকরিচ্যুতই করেনি দাম্পত্য জীবনেও ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন, আমার কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকলে সেটা প্রমাণ করুক। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করেছে। আমার জায়গায় ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে আরেকজনকে নিয়োগ দিয়েছে। এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আজম মেম্বার পোড়াহাটি ইউনিয়নের লোক হলেও তার কথায় চলে এই এলাকা। তিনি গোয়ালপাড়া বাজারের গ্রামবাংলা-মাহিদ্র ষ্যান্ড নিয়ন্ত্রণ সহ এলাকার শালিস বিচার নিয়ন্ত্রণ করেন। এই স্কুলের সভাপতি তিনি না হলেও তিনি বিদ্যালয় চালান।নিয়োগের নামে অর্থ হাতাচ্ছেন তিনি।