২৪ হাজার কোটি টাকা হারালেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের শেয়ারবাজার টানা বড় দরপতনের মধ্যে পড়েছে। আর এতে তিন সপ্তাহের টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ২৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই হারিয়েছেন সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ওপরে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে এই অর্থ হারিয়েছেন তারা।

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছিল। এর মধ্যে এক কার্যদিবসে রীতিমত ধস নামে শেয়ারবাজারে। আর এতেই বড় অঙ্কের এই অর্থ হারান বিনিয়োগকারীরা। একইসাথে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায় এবং তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা।

আগের দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১৯ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী টানা তিন সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমল ২৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। যার ফলে বাজার মূলধন বৃদ্ধি বা হ্রাসের অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১০৭ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৩৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ তিন সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৯৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট কমেছে।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫২ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৮০ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এছাড়াও ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৫ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৯ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৮ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯১ টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৩ টির। আর ১৫৭ টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬০১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ গত সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ গ্রুপ বা ভালো কোম্পানির অবদান ছিল ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া ‘বি’ গ্রুপের ২০ দশমিক ৪২ শতাংশ, ‘জেড’ গ্রুপের দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ অবদান ছিল।

উল্লেখ্য যে, গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জাহোলসিম, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রভাতী ইনস্যুরেন্স, রহিমা ফুড এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।