বর্তমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আদা চাচাদের বড় অভাব.

জেমস অলক চৌধুরী

২১ শে আগস্ট ২০০৪ জনসভায় গিয়ে ভীড়ের কারনে রমনা ভবনের দোতালায় দাড়িয়ে নেত্রীর ভাষন শুনছিলাম।তারপরের ঘটনা সকলেরই জানা।

“স্বপন”-আমাদের সময় পিরোজপুর ছাত্রলীগের নেতা।আজ স্বপন নেই। ২১ শে আগস্ট বোমা হামলার সময় এক সাথে মিটিং গিয়েছিলাম। আমি ভীড়ের কারনে ওকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।ঘটনার প্রায় আট বছর পর আমার নাম্বারে ফোন।আমার ছোট মেয়ের কাছে সিমটা ছিলো।এক মহিলা আমাকে খুঁজছিলো আমার মেয়েকে অনুরোধ করেছে আমি যেন কল ব্যাক করি। বাসায় এসে কল ব্যাক করলাম, আমি তো হতবিহ্বল স্বপনের বৌ ফোন ধরে বললো স্বপন মারা গেছে।বিশ্বাস করতে পারিনি।অনেকদিন ভুগে ভুগে স্প্রিটারের যন্ত্রণায় মারা গেছে।

“রফিকুল ইসলাম, আদা চাচা”-
মনে হতে পারে আদা চাচা এ কেমন নাম?
সকলে ওনাকে আদা চাচা বলেই ডাকতেন এমনকি নেত্রীও ডাকতেন। কারণ আদা চাচা আদা কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে সেগুলো কৌটোয় করে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচীগুলো তে নিয়ে যেতেন।
মিছিল-বক্তৃতা শেষে যেনো নেতা-কর্মীদের কন্ঠস্বর ভেঙে না যায়; সেজন্য রফিকুল ইসলাম ওরফে আদা চাচা সেই কৌটো ভর্তি আদা কুচি আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীদের খাওয়াতেন।
স্বয়ং নেত্রী নিজেও আদা চাচার কাছ থেকে আদা কুচি চেয়ে খেতেন।
জামাত- বিএনপি’র জোট সরকারের দুঃশাসনের আমলে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের দিনগুলোতে আদা চাচারা দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে থাকতেন।
২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভার মঞ্চের খুব কাছাকাছি ছিলেন আদা চাচা। সেদিনও তিনি কৌটোভর্তি করে আদা কুচি নিয়ে গিয়েছিলেন সভার নেতা-কর্মীদের খাওয়াবেন বলে।
কিন্তু সেদিন বিএনপি-জামাতের জঙ্গীদের গ্রেনেড নিক্ষেপে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীদের মতো রফিকুল ইসলাম আদা চাচাও রক্তাক্ত হন।
ঘটনাস্থল থেকে আদা চাচা কে রক্তাক্ত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা গেলেও চলে যান না ফেরার দেশে! যাওয়ার আগে আদা চাচার শেষ ভাষ্য ছিলো, হাসু বুবু! বুবু ঠিক আছেন তো!?হাসু বুবু বেঁচে আছেন তো!?”

আজকের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শক্ত অবস্থান আদা চাচাদের সেদিনের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। আমরা কি মনে রেখেছি আদা চাচাদের ত্যাগের কথা?
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত রফিকুল ইসলাম ওরফে আদা চাচাকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি।
আজও অনেক আদা চাচা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তারা কিছু পাওয়ার আশাতে আওয়ামী লীগ করেনা।তারা বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম।অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক রাজনীতির নাম।প্রগতির নাম।

হুমায়ুন আজাদ স্যার বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কী করবে?’ শুধু হুমায়ূন আজাদ স্যারই নন, রাজনীতি নিয়ে অনেকেই অনেক কটূ কথা বলেন। এই সুযোগ করে দিয়েছেন স্বয়ং রাজনীতিবিদরা। আমাদের দেশে এমন অনেক রাজনীতিবিদ আছেন, যাদের কথা, কাজ, আচরণ, চিন্তা-ভাবনা রাজনীতির প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।

১৯৭৫ এর সময় থেকে শুধু মৃত্যুর মিছিল নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতির জন্য কত শত তাজা প্রান অকাতরে বিলিন হয়ে গেলো বসুনিয়া, নূর হোসেন, মাহফুজ বাবু সহ শত শত।
আগস্ট এলেই ভয় হয়।মনে হয় কবে যাবে এই মাস?
আমি মনে করি কর্মী বিহীন রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতি, টেক্কা মারার রাজনীতি কখনো কখনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে থাকে এটাই বাস্তবতা।

পাঠক,
আমরা আসলে পদ পদবী বিহীন বঙ্গবন্ধুর আর্দশের কর্মী।পদের লোভ নেই, তবে অনুভূতি ও আর্দশের লোভ আছে।আমরা অভিভাবক বিহীন ৭৮ এর কর্মী। আমরা শেখ হাসিনার “আদা চাচা”।১৫ আগস্ট মোকাবেলা করে ২১ আগস্ট মোকাবেলা করার কর্মী আমরা।রক্ত চক্ষুর ভয় একেবারেই নেই আমাদের।
রাজনীতি করেন তবে রাজাকার বাদ দিয়ে মুসলিম লীগের বংশধর বাদ দিয়ে করেন।
এমপি হবেন জেলার নেতা হবেন হন আপত্তি নেই তবে আওয়ামী লীগকে পরিশুদ্ধ করেন।হাইব্রিড, পিনিকব্রিড,বিহারীব্রিড, হাতের তালুতে লোম গজানো ব্রিড,দেবীব্রিড বাদ দিতে হবে।

ব্রিডদের আর বেশী দিন নেই।এবার জমবে মেলা বটতলায় মাথা ভাংঙ্গার নদীর মোহনায়।

টাকা দিয়ে নেতা হবেন তা হবে না তা হবে না। নেত্রীকে বলো দেবো।সব জানি।

আমরা জানি আমাদের ডাক আসবে তবে সুসময়ে নয়, দুঃসময়ে। আমরা প্রস্তুত।আবার যাবো দেশ বাঁচাতে,দল বাঁচাতে।

তবে মনে রাখবেন বাংলা ছায়াছবির নাম ” পালাবি কোথায়”। এবার ব্রিড নিয়ে থাকলে রক্ষা নেই।

একটাই কথা শেখ হাসিনা।
একটাই চাওয়া মুজিব আর্দশ।

এখনো সময় আছে।সংশোধন হতে হবে।রাজাকার মুসলিমলীগ আর ব্রিড ছাড়েন।মেঠো আওয়ামী হই আসেন।,কাঁদা মাটির আওয়ামী লীগ।

আসেন স্বপন হই – আাদা চাচা হই।রাজাকার নিপাত যাক,চাঁদাবাজ নিপাত যাক,সব রকমের ব্রিড নিপাত যাক।