ঈদের পর আন্দোলন?

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গোপনে রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আর সেই আলোচনার অংশ হিসেবেই ২৮ মার্চ বাম জোটগুলো হরতাল ডাকছে বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র বলছে, এই হরতালকে বিএনপি সমর্থন দিবে, নাগরিক ঐক্যসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলও হরতালকে বাইরে থেকে সমর্থন দিবে। এই হরতালের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ গঠতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, রাজনৈতিক দলগুলো কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে তারা কেউই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যেতে রাজি নয়। যে যার অবস্থানে আছে সেই অবস্থান থেকেই অভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার পক্ষপাতী রাজনৈতিক দলগুলো। আর এইরকম কর্মসূচির ফলাফল কি হয় তা দেখার জন্যই ২৮ মার্চ বাম গণতান্ত্রিক জোট হরতাল ডেকেছে। হরতালের পরপরই রোজা হচ্ছে। রোজার সময় রাজনৈতিক দলগুলো অন্য ধরণের জনসংযোগ করবে। মূলত ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে তারা রাজনীতিতে সরকারবিরোধী একটি মেরুকরণ তৈরি করার চেষ্টা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে এবং ঈদের পর রাজনৈতিক দলগুলো ধাপে ধাপে কর্মসূচি দেবে বলেও জানা গেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লাগামহীন পর্যায়ে চলে গেছে এবং মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। এই অবস্থায় সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, তা নিতে পারছে না। আর এ কারণেই এই ইস্যুটিকে তারা সামনে আনতে চাইছে। এই রোজার মধ্যেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এ কারণেই ২৮শে মার্চের হরতালের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে।

দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি দুর্নীতি একটি বড় ইস্যু হিসেবে বিরোধী দলগুলো আনছে। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ইস্যুগুলোকে বিরোধীদল গুরুত্ব দিবে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির যে প্রধান দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন নয়, এই দাবিতে কোনো রাজনৈতিক দলই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাজি নন। বাম গণতান্ত্রিক জোট বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনেও আগ্রহী নয়। তবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের একজন নেতা বলেছেন, বিএনপি যদি আমাদের কর্মসূচি অনুসরণ করে সেক্ষেত্রে আমাদের কোন কিছু করণীয় নাই। বরং তারা তাদের মতো কর্মসূচি করবে, বাম গণতান্ত্রিক জোট আর কারো লেজুড় হবে না বলেও ওই নেতা জানিয়েছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আগ্রহী গণঅধিকার পরিষদ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যের মত দলগুলো বিএনপির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থী মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলো আবার নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবগুলো রাজনৈতিক দলই এখন আপাতত দ্রব্যমূল্যকে প্রধান এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি সাময়িক ইস্যু এবং সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে এটি শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর সেটি যদি হয় তাহলে সরকারবিরোধী আন্দোলন আদৌ সম্ভব হবে কিনা, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন বলে অনেকে মনে করছেন।