পত্রিকা বিক্রি  করেই বদলে গেছে বেলালের ভাগ্য

 বুলবুল আহম্মেদ বুলু  বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে। এই গানটির সঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে পত্রিকা বিক্রেতা – পত্রিকার ফেরিওয়ালা বেলাল হোসেন এর জীবনের গল্প বেশ মিলে যায়। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় তার ছুটে চলা। উত্তরের জেলা শহর নওগাঁ হইতে খুব সকালে বিভিন্ন পত্রিকা নিয়ে এক সময় সাইকেল যোগে শুরু হতো বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে  খবরের কাগজ বিক্রি।  সকালে দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় খবরের কাগজ। সংবাদপত্র পড়ুয়ারা সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চায়ের টেবিলে রাখা পত্রিকা হাতে নিয়ে এক নজর চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় পত্রিকার প্রধান প্রধান শিরোনাম গুলো।
নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের সরিজপুর গ্রামের আজিমুদ্দীন মন্ডলের ছেলে
বেলাল হোসেন  ।  পেশায় তিনি একজন পত্রিকা বিক্রেতা। পত্রিকা বিক্রির টাকায় চলে তার  সংসার। ১যুগ ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত। বাবার তেমন জায়গা জমি না থাকায় এই পেশার উপার্জিত টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তিনি। পত্রিকা বিক্রি করে পাল্টে গেছে তার সংসার জীবনের চিত্র। পত্রিকা বিক্রির টাকায় তার ভাগ্যবদল হয়েছে।সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।
পত্রিকার পাতায় কত মানুষের জীবনের ঘটনা প্রকাশ হয়।
আর সেই কাগজের পাতায় পাতায় কত খবরই ছাপা হয়! ছাপা থাকে না শুধু বেলাল এর গল্পটি
এক সময় বেলালের জীবন নিদারুণ কষ্টে ভরা ছিল।
বাড়ি-ভিটা সব মিলিয়ে পৈত্রিকসূত্রে পাপ্ত মাত্র সামান্য  কিছু জমি । কোন মতে মাথা গোজার ঠাই হিসেবে মাটির ঘরে তার বসবাস। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে এক সময়  কোনোমতে চলতো তার কষ্টের সংসার। বারার অভাবী সংসারের হাল ধরতে তিনি প্রথমে গাড়ীর চালক পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নেয়।
সংসার জীবনে তার রয়েছে এক স্ত্রী, এক ছেলে।
পিতার অভাব – অনটনের সংসারে তার লেখাপড়া করার সুযোগ তেমন হয়ে ওঠেনি। আর তাই জীবন জীবিকার তাগিতে বাধ্য হয়ে পিতার পরামর্শে এই পেশায় জড়িয়ে যান বেলাল । বর্তমানে তিনি এই পেশাকে পবিত্র পেশা হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
ঢাকা, রাজশাহী এবং বগুড়া থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো নওগাঁর এজেন্ট ইয়াছিনের কাছ থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করার পর সে পেপারগুলো বদলগাছী  উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাঠকদের হাতে টাকার বিনিময়ে সংগৃহীত পত্রিকাগুলো তুলে দিয়ে থাকেন।
এরপর উপার্জিত টাকা থেকে এজেন্টকে  পত্রিকার বিল দেয়ার পর যে পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট থাকে তা হচ্ছে তার একমাত্র আয়ের উৎস বলে জানান  বেলাল ।এখন তার মাসিক আয় ৩০হাজার টাকা। তিন খোপ ইটের পাকা বাড়ি করেছেন। গরু সেড এর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ১লাখ ৪৫হাজার টাকায় একটি মোটরসাইকেল কিনে পত্রিকা এখন খুব দ্রুত পাঠকের কাছে পৌছে দিচ্ছে।
 খবরের কাগজের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত খবর পৌঁছে দেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। সঠিক সময় খবরের কাগজ দিয়ে সবাইকে খুশি করে সে। এ কাজে সে আনন্দ পায়। কিন্তু নিজের জীবনের খবরটাই সে অনেক সময় ভুলে যায়।
খরবের কাগজ ফেরি করে বিক্রি করার সময় কথা
হয় বেলালের সঙ্গে। বলাল জানাই  জীবন যোদ্ধা আমি এক গরিব কৃষকের ছেলে।   সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়ার সুযোগ হয়, আমি কাজে সন্ধানে প্রথম কাজ শুরু করি ইট ভাটার গাড়ি চালক হিসেবে।  কাজ হয় ছয় মাস আর ছয় মাস বেকার থাকি। তাই আমার বাবা আমাকে বলে বাবা তুমি পত্রিকার ব্যবসা করবে কি? তোমাকে আর  কাজের সন্ধান করা লাগবে না। তাই আমি ভেবে চিন্তে  পত্রিকার ব্যবসা জন্য প্রথমে বদলগাছী উপজেলার পত্রিকার হকার আবু সাইদ এর কাছ ১লাখ ১০হাজার টাকা দর করে সাইট লিলাম।  চলার জন্য বাইসাইকেল নিয়ে পত্রিকা বিলি শুরু করি।  দীর্ঘ তিন বছর পরে কিছু টাকা জমে মটরসাইকেল ক্রয় করি এখন  আমার ব্যবসা ভাল।  আমি বদলগাছীতে ১ লাখ টাকায় আরো দুইটি সাইট ক্রয় করি। এখন আমার মাসে ৩০ হাজার টাকা  পত্রিকা বেচে  আয় হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই আছি