ছলচাতুরি করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না : নজরুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশে, গণতন্ত্র, সামাজিক মর্যাদা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এবার ছলচাতুরি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। তিনি বলেন, আজকের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে কেবল একজন ব্যক্তিকে সম্মান জানানোর আয়োজন চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বুধবার (২৩ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের দোতলায় সেমিনার কক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
৭১‘র ২৩ মার্চ বৃহত্তর দিনাজপুরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শফিউল আলম প্রধানের স্মরণে ও স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় করণীয় শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাগপা।
সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি’র চেয়ারম্যান আবু তাহের, জাগপা প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, প্রিন্সিপাল হুমায়ূন কবির, যুগ্ম সম্পাদক ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী, মো. সাইফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ,জাগপা নেতা মাষ্টার সুমন, যুব জাগপা সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইবরাহিম রাজা,প্রমুখ।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, মরহুম শফিউল আলম প্রধান ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ নেতা। তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ২৩ মার্চ বৃহত্তর দিনাজপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন। যদিও সেদিন ছিলো পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন দিবস। শফিউল আলম প্রধান সেদিনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার নিজ জেলা দিনাজপুরে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। অথচ তখনো পাকিস্তান বাহিনী সক্রিয়। কিন্তু আমরা সেদিনটাকে মনে রাখিনি।
তিনি বলেন, শুধু কি তাই জাতি তো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথাও মনে করতে পারেনা। কিন্তু সে তো ইতিহাস। স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে মওলানা ভাসানী বা শেখ মুজিবুর রহমানের ভুমিকা কি অস্বীকার করা যাবে? যুদ্ধকালীন সময় জিয়াউর রহমানের অবদান কি করে ভোলা যায়?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বের কোন দেশে নয় মাসের যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে? লাখ লাখ নারী তাদের ইজ্জত সম্ভ্রম হারিয়েছেন? যেখানে স্বাধীনতার ঘোষকের অবদান স্বীকার করা হয় না। যেখানে শফিউল আলম প্রধানের কথা তো পরে! আজকে ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে! এখন তো আওয়ামী লীগ ছাড়া কারো কিছুই স্বীকার করা যায় না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তাদের কয়জন লোক অংশ নিয়েছিলো? আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হয়, অথচ সেখানে যুদ্ধের সময় যিনি মূখ্যমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন বা মুজিবনগরে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ইউসুফ, বীরশ্রেষ্ঠ বা বীর উত্তম ও বীর বিক্রমদের সম্মান জানানোর কোনো আয়োজন নয়। শুধু একজনকে সম্মান জানানোর আয়োজন। আসলে যাকে জোর করে সম্মান জানানো হয় তিনি তো কম গুরুত্বপূর্ণ! যদিও তিনি তা নন।
তিনি বলেন, আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে গণতন্ত্রের জন্য। সেটা আজ কোথায়? গণতন্ত্রের বাহন হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু আমাদের নির্বাচনকে কেউ সুষ্ঠু বলেনা।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসংগে তিনি বলেন, এখন জিনিসের দাম এমন যে, হালাল উপার্জন করে খেয়ে পড়ে টিকে থাকা দায়। তার ওপর তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তারা (সরকার) বলছে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। তো বিশ্ববাজারে যখন দাম কমে তখন কী আপনারা দাম কমান? দাম বাড়ার আগেই যে বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন তাহলে সেই টাকা ভর্তুকি দেন। কিন্তু তারা তা করেনা। কারণ সরকারের লোকেরা দুর্নীতিবাজদের সাথে মিশে আছে। তারা তাদের থেকে ভাগ পায়। এমতাবস্থায় আমাদেরকে শফিউল আলম প্রধানের মতো সংগ্রামী মানসিকতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অত্যন্ত জরুরি। দেশে গণতন্ত্র, সামাজিক মর্যাদা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ের বিকল্প নেই। এবার সরকার রক্ষা পাবেনা। কোনো ছলচাতুরি করে পার পাবেনা। আজকে সেই তথাকথিত ক্ষমতাবান ফখরুদ্দিন মঈনউদ্দিন কোথায়? এখনো যারা তাদের মতো স্বপ্ন দেখছেন তারা ভুলে যান। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাকে পছন্দ করবে তারাই সরকার পরিচালনা করবেন।