নরসিংদীতে বাঙ্গির বাম্পার ফলনে ও দামে কৃষকের মুখে হাসি

হারুনুর রশিদ নরসিংদী প্রতিনিধি:
বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে বাঙ্গি। তীব্র গরম আর সামনে আসছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ মুছতে অনেকের ইফতারে বাঙ্গির চাহিদা থাকে বেশি।
নরসিংদীর রায়পুরর বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি বিস্তীর্ণ চর জুড়ে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই কেবল দিগন্ত জোড়া সবুজ-হলুদ সংমিশ্রণে চৈত্রের বাহারী মৌসুমী ফল বাঙ্গি চাষের সমারোহ দেখা যায়। উৎপাদিত ফসল নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বাঙ্গির বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পারায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি ঝিলিক।
কম পুঁজিতে অধিক ফলণ ও দাম পাওয়ায় প্রতি বছরই এখানকার চাষিরা বাঙ্গি চাষাবাদে ঝুকছেন। প্রকার ভেদে একটি বাঙ্গি পাইকারি ৫০ থেকে ৭০ টাকা এক’শ পিস বাঙ্গি সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে এখনো বাঙ্গির জমজমাট হাট না বসলেও কিছু কিছু হাট-বাজারে বাঙ্গি বিক্রি চোখে পড়ছে। দামও বেশ চড়া এগুলো তারা প্রতি পিছ ১শ ৫০ থেকে ২শত টাকা মুল্যে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
এক বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষে কৃষকদের খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে লাভ করতে পারবে কৃষকরা।
গত বৃহস্পতিবার সরজমিনে গেলে দেখা যায়, বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি এলাকার বলেন বিস্তীর্ণ মাঠ জুরে বাঙ্গি খেত। এখনকার
বেশিরভাগই মানুষই মৌসুমী ফল বাঙ্গির চাষে ঝুঁকেছেন। বাঙ্গিগুলো বাজারজাত হওয়ায় কৃষকদের কাছে প্রতিদিনই নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা বেশ চোখে পরার মত দেখা যায়। বাঙ্গির মৌসুমকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে ওঠেছে আড়ত। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আড়তে নিয়ে আসেন। পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে এখানকার বাঙ্গি কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া অনেক পাইকররা সরাসরি কৃষিকদের কাছ থেকে জমি থেকেই বাঙ্গি কিনছেন। এ মৌসুমে অন্তত: কয়েকশো লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে এ এলাকায়।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ‘গত বছর করোনা ও লকডাউনের কারণে অনেক বাঙ্গি বিক্রি করতে পারিনি। এতে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছিল। তবে এবছর আগাম চাষ করার পাশাপাশি সামনে রমজানে ভাল দামে বিক্রি করতে পারায় গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি লাভ ভাল হবো। তবে তাদের মনে দাম নিয়ে সংশয়ে থাকলেও এবছর আগে ভাগেই ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি।
এবছর ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। এতে গাছ মারা না যাওয়া ফলন ভাল পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন পাইকরা এসে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যচ্ছে। দাম ভাল পাওয়ায় আমাদের লাভও ভাল হচ্ছে। এবছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাম বাঙ্গির চাষ করেছি। এতে ভাল ফলন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গি বিক্রি করে লাভ করেছি। এতে গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।’
স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া জানান, তিনি গত টানা ৪বছর যাবত বাঙ্গির চাষ করে আসছেন। এবার তিনি ৩৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এবার বাঙ্গি চাষে তার ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে তার জমির সকল ফসল বিক্রি করতে পারলে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মতো লাভবান হতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গেলো বছর একই জমিতে তিনি ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করে বাঙ্গির চাষ করে তা ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এতে তার ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এবার তিনি গতবারের বাজার মুল্য থেকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা বুক বাঁধেন।
পায়কারী ক্রেতা মোরশেদ মিয়া জানান, তারা এবছর প্রতি ১০০ পিস বাঙ্গি ৭ হাজার টাকায় কৃষকের জমি থেকে ক্রয় করছেন। জমি থেকে ক্রয় করার পর এগুলো বাজারে নেওয়ার আগে মজুরি ও গাড়ি ভাড়া সহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে প্রতি পিসে ৫ টাকা লাভ হয় বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন পায়কারী ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পায়কার ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের জমি থেকে বাঙ্গি ক্রয় করে এগুলো নরসিংদী জেলার বিভিন্ন এলাকার বাজার ও আশেপাশের অন্যান্য হাট বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে। এতে তাদের প্রতি বাঙ্গিতে সব মিলিয়ে ৫ টাকা লাভ হলেই সন্তুষ্ট।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। যা হতে প্রায় ৭শ মেট্রিক টন বাঙ্গি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চাষিরা স্বল্প খরচে অনায়াসে তিন গুন লাভ করা যায় বিধায় দিন দিন এর উৎপাদন বেড়েই চলেছে। এতে শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় বাজারেও বাঙ্গির ভালো চাহিদা রয়েছে। এছাড়া কম সুগার থাকায় ইহা ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,রায়পুরা হতে বাঙ্গি চাষে কৃষকদেরকে নিয়মিত উৎসাহ এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।