যশোরের লিতুন পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা

বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না নূরার পরে এবার আরেক অদম্য শিক্ষার্থী লিতুন জিরার পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পাঁচ লাখ আর্থিক সহায়তার চেক পেতে যাচ্ছে লিতুন। লিতুন জেলার মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের জাহানারা বেগম ও হাবিবুর রহমান দম্পতির মেয়ে।
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লিতুনের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জন্ম থেকেই লিতুন জিরার দুটি পা নেই। দুই হাতও নেই কনুইয়ের নিচ থেকে। তবু লেখাপড়ার অদম্য চেষ্টা মেয়েটির। লেখার জন্য ডান হাতের বাহুর অগ্রভাগ দিয়ে চোয়ালে কলম চেপে ধরে। এভাবে লিখেই ২০১৯ সালে স্থানীয় খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং বৃত্তি পায়। বর্তমানে সে গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। সেখানকার ফার্স্ট গার্ল লিতুন।’
লিতুন জিরার আর্থিক সহায়তা পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১০ মার্চ একটি চিঠিতে জানানো হয়, লিতুন জিরার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য মঞ্জুর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার আফরোজা বিনতে মনসুর গাজী লিপির স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ওই কার্যালয় থেকে চেক সংগ্রহের অনুরোধ করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেয়ের পড়াশোনা ও চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। আগামী ৩ এপ্রিল নিজ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে লিতুন জিরাকে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেবেন। এর আগে ৩ মার্চ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করে চিঠি লেখেন লিতুন। সেই চিঠি পেয়েই প্রধানমন্ত্রী তার খোঁজ নেন। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে একটি চিঠি বাড়িতে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাক্ষাৎ চেয়ে লিতুন আবেদন করে। সেই আবেদনে আমার মেয়ে তার পড়াশুনা, ডাক্তার হওয়ার অভিপ্রায় উল্লেখ করে তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করে। তার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আগামী ৩ এপ্রিল ঢাকায় যেতে বলেছেন। তার পিএস আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। সেদিন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমার মেয়ের হাতে চেক তুলে দেবেন বলে জেনেছি।’
পরিবারে দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট লিতুন। তার বাবা হাবিবুর রহমান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এআর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। তিনি উপজেলা তাঁতী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক।
তিনি জানান, লিতুন শুধু পড়াশোনাতে নয়, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও বেশ ভালো। সে টানা দ্বিতীয়বারের মতো রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে। এ ছাড়াও আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং খুলনা বেতারেও নিয়মিত গান ও কবিতা আবৃত্তি করে যাচ্ছে সে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন জানতে পেরে খুশি লিতুন জিরাও। খবরটি প্রথমে তার বাবাই তাকে দেন। লিতুন জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারবে সেটা ভাবতেই তার খুব খুশি লাগছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘লিতুনের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। সে নিজে চলাফেরা করতে পারে না। তাই তার একটি গাড়ির দরকার সব সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অর্থ সহায়তার টাকায় তার চলাফেরার জন্য একটি গাড়ি ও পড়াশোনার জন্য কিছু টাকা সঞ্চয় করার ইচ্ছে রয়েছে।’
লিতুন জিরাকে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ লাখ টাকা অনুদানের বিষয়ে জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমরা সেটি জানতে পারি না।’
যোগাযোগ করা হলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’