দেশে দেশে অস্থিরতা: বাংলাদেশ কতটা নিরাপদ?

কুতুব মোড়ল : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশে দেশে নানা রকম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ পেরুতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে, তারা বিক্ষোভ করছে। এর আগে শ্রীলঙ্কায় এক ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে এবং সেখানে জনগণ এখন প্রতিদিন রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারকে নিয়ে নাটক শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজেডিতে রূপ নিয়েছে, সেখানকার সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকারের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে আবার পার্লামেন্টকে বসতে বলেছেন এবং ইমরান খান যে ইমপিচ হতে যাচ্ছেন তা এখন অবধারিত এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাহজাদের নাম গণমাধ্যমে আসছে। কিন্তু এটির পরও পাকিস্তানের পরিস্থিতি শান্ত হবে না বলেই অনেকে মনে করেন এবং পাকিস্তান একটা দীর্ঘ অস্থিরতার পথে যাত্রা শুরু করেছে।


ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে এবং মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে। বিশ্বের দেশে দেশে খাদ্য সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটা নজিরবিহীন সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। পুরো বিশ্ব যেন অস্থির হয়ে উঠছে। এর প্রধান কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কারণ, এই দুটি দেশই বিশ্বে গমের অন্যতম যোগানদাতা এবং বিশেষ করে ইউক্রেনকে মনে করা হয় ইউরোপের শস্য ভাণ্ডার। অন্যদিকে, রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইউরোপে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে এবং এই গ্যাস সংকটের কারণে এখন ভয়ঙ্কর এক সঙ্কটে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। এরকম পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্বজুড়েই খাদ্য সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং এই পরিস্থিতি কোথাও কোথাও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে, যেমন- শ্রীলঙ্কা। এরকম বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কতটুকু নিরাপদ, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ কি এই উত্তাপের আঁচ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারবে নাকি এরকম অস্থিরতা বাংলাদেশেও সৃষ্টি হবে? সেটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব বড় একটি প্রশ্ন। যদিও বাংলাদেশে রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষণীয়, তবে সরকার রমজানের শুরুতে যেরকম লাগামহীনভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছিল সেটির লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে। প্রথম রোজার সময় যেভাবে বেগুন, ছোলা, সয়াবিন তেলসহ জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছিল সেটি কমে এসেছে। তবে বাংলাদেশ সবচেয়ে আশার দিক হলো যে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন খাদ্য সংকট নেই। বরং যে চাহিদা সেই চাহিদার তুলনায় খাদ্য বেশি আছে। যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে, তারা অতি লোভের জন্য বা সিন্ডিকেট করার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকট না থাকাটা বাংলাদেশের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের সুবিধাজনক দিক যে, বাংলাদেশ খাদ্য আমদানি নির্ভর নয়। বাংলাদেশের মোটা দাগের খাবার এবং চাহিদা দেশ থেকে মেটানো সম্ভব হয়। আর যেটা বিদেশ থেকে আসে সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর এ কারণেই বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতির ঊর্ধ্বগতি হলেও সেটা শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করবে না বলেই জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অস্থিরতার প্রধান কারণ হয় না বরং পণ্য অপ্রাপ্তি অস্থিরতার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ। আর এ কারণেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে খুব একটা অস্থির হয়ে পড়বে, এমনটি মনে করেন না অনেকেই। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে, বাংলাদেশের অনেকগুলো বিষয় এখন নজর দেওয়া দরকার। যেমন- তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তাছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বেঁচে থাকার জন্য তীব্র কষ্ট করতে হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে এখনই যদি এসবের লাগাম না টেনে ধরা যায় তাহলে অস্থিরতার ঢেউ বাংলাদেশও আছড়ে পড়তে পারে। তবে যেসব দেশগুলোতে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে তারা সবগুলোতেই নেতৃত্ব একটি প্রধান সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হলো, বাংলাদেশের একজন নেতা আছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, আস্থাভাজন একজন জনপ্রিয় নেতা। আর তিনি মানুষের ভালো-মন্দ ইত্যাদি সহজেই বুঝতে পারেন। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো রকম অস্থিরতার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।