এ প্লাস না দিলে বোর্ড ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারি ছাত্রলীগ নেতার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
‘আমরা ছাত্রলীগ, যেখানে যাব সেখানেই বুলেট। রোজা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি, গোল্ডেন এ প্লাস পাব। পরীক্ষার খাতায় গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি, ‘এমপি আনার গ্রুপ’ (সরকারি দলীয় স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার)। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ডমোড ভেঙে ফেলবানে।’

পরীক্ষার হল থেকে ফেসবুকে ভিডিও লাইভে এসে এভাবেই নানা কথা বলছিলেন মনির হোসেন ওরফে সুমন নামের এক ছাত্রলীগ নেতা।

তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

মনির হোসেন উপজেলার প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্রের হয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ছয় মাস মেয়াদি কোর্সের শিক্ষার্থী।

শুক্রবার দেশব্যাপী কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ছয় ও তিন মাসমেয়াদি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেন মনির হোসেনসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা। তারা ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন।

ওই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্টিত হয়। ১১.৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে ওই কেনন্দ্রে। দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে আসেন ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন।

যে কক্ষ থেকে তিনি লাইভে আসেন, সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন’ যারা সবাই ২০২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

ফেসবুক লাইভে এসে মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা চলছে। সবাই লেখছে আমি বসে আছি। আমি তো বাংলায় লিখিনি। সব ইংরেজিতে। আমি লিখেছি গ্রুপ কি তা আনার গ্রুপ। আমার নেতার নাম দিয়ে দিছি। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ডমোড ভেঙে ফেলবানে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরীক্ষা চলছে। জীবনে আজ রেকর্ডধারী পরীক্ষা দিলাম। চশমাটা চোখে দিয়ে নেই নাই। ভাব বাড়ছে না পরীক্ষার হলে। আমরা তো ফাস্ট ছাত্র। ফাস্ট বেঞ্চিতে বসছি। যাইহোক পারি আর না পারি। আমার খাতা দেখবেন? এই দেখেন।’

এরপর তিনি লাইভে খাতা দেখিয়ে বলেন, ‘আমার খাতায় আমি লিখেছি। ইংরেজিতে মাস্টার্স করা তো। দেখেন সব ইংরেজিতে লিখেছি। সালামও লিখেছে। ওরাও লিখেছে বলে অন্য শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে বলে কি লিখেছিস তুই মনি? ওই একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে ওই পাশে। ওই যে একটা খালা। ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে লাইভ। কাকা আমরা সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিচ্ছি। এরপর ফোনের ক্যামেরা খাতার দিকে ঘুরিয়ে বলেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। আমরা ইয়ার্কি মাচ্ছিনে। আমাদের কম্পিউটার সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা আছি ঝিনাইদহ পলিটেকনিক কলেজে। অন্য শিক্ষার্থীকে উদ্দেশে করে বলেন, গল্প না করে লেখ বাবা।’

এদিকে ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর নানা মন্তব্য উঠে এসেছে। ওমর আলী সোহাগ নামের একজন তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, ‘কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ বহির্ভূত কাজ করেছে। ছাত্রলীগ মেধাবীদের সংগঠন। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বোঝে না, ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ মানে না। তাদের ছাত্রলীগে থাকার কোনো অধিকার নেই। স্বজন প্রীতির মাধ্যমে অযোগ্য, অনুপ্রবেশকারী, ছাত্রলীগের মর্যাদা রক্ষার দায় যার মধ্যে নেই তাকে অবিলম্বে ছাত্রলীগ থেকে অপসারণ করা হোক।’

এ বিষয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমি পরীক্ষা শেষে একটু লাইভ দিয়েছি। এটা তেমন কিছু না। একটু ভুল করেছি হয়তো। এটা নিয়ে এত মাতামাতি করার কী আছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ইনচার্জ মাহবুব উল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পরীক্ষা ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা সকলের জন্য সমান। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা হোক, আর সাধারণ শিক্ষার্থীই হোক না কেন। কেন্দ্রে ফেসবুক লাইভের কোনো সুযোগ নেই। ফেসবুকে লাইভ করা নিয়ে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারুল আজিম আনার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ সময় কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের দোষী হিসেবে আখ্যায়িত করে ওই কেন্দ্র বাতিলের কথা জানান তিনি। একইসাথে পরীক্ষার হল থেকে ফেসবুক লাইভে এসে বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্য করার ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণের কথাও জানান তিনি।