জনপ্রিয় নেতারা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক হয় না কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আবেগ মিশ্রিত একটি পদ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলটির কেবল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ নয়, এই পদটির সঙ্গে আলাদা আবেগ জড়িত রয়েছে। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগকে এক নতুন জীবন দিয়েছিলেন। জনগণের রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি করেছিলেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটির আলাদা মাহত্ম রয়েছে। আওয়ামী লীগ সংগঠনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই পদটিকে। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পর আস্তে আস্তে দৃশ্যপটের পরিবর্তন হতে থাকে।
৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগ এক ঝঞ্ঝা ও বিক্ষুব্ধ সময় পার করেছে। সেসময় দলের মধ্যে বিভক্তি এসেছিল। মালেক উকিল এক পক্ষে মিজান চৌধুরী আরেক পক্ষে, দলের ভেতরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও ছিল এবং প্রচণ্ড। আর এই সমস্ত বাস্তবতার কারণেই সেই সময় আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল। এরকম অবস্থায় দলের হাল ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আসার পরে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময় বিভিন্ন সময়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এসেছেন। বেগম সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফ এবং সর্বশেষ ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো যে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ওবায়দুল কাদের বাদে আওয়ামী লীগের অনেক জনপ্রিয় নেতা কখনো সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। কিন্তু তাদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ ছিল। যেমন,
তোফায়েল আহমেদ: তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং স্নেহের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তোফায়েল আহমেদ কখনোই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদটা তার জন্য অধরাই রয়ে যায়।


আমির হোসেন আমু: আমির হোসেন আমুকে এক সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে, তিনি সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। বিশেষ করে ১৯৮১ এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যারা কাজ করেছেন, সংগঠন গোছানোর ক্ষেত্রে যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু অন্যতম। ছাত্রলীগ, যুবলীগ সবই তার কর্তৃত্বে থাকতো একটা সময়ে। অনেকে সে সময় আমির হোসেন আমুকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি।
মোহাম্মদ নাসিম: মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় চার নেতার অন্যতম এম মনসুর আলীর সন্তান এবং একজন দক্ষ সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তিনিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি।
বিভিন্ন সময় এরকম জনপ্রিয় নেতারা কেন সাধারণ সম্পাদক হন না এই দিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম বিশ্লেষণ আছে, নানা রকম কথাবার্তা আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য হয়তো জনপ্রিয়তাই একমাত্র মাপকাঠি নয়।