কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার


টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ১৩ বছর পার করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এই অবস্থায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের ভেতর থেকে স্যাবোটাজ সরকারকে প্রথমবারের মতো কিছুটা হলেও কোণঠাসা অবস্থায় ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিউমার্কেট এলাকায় সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকা, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের ব্যাপারে জনমনে কিছু অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। আর এই অস্বস্তি তৈরির ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্ররোচনা দিচ্ছে। ফলে সরকার এক কঠিন সময় পার করছে এবং সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির সহসা উন্নতি হওয়ার কোন লক্ষণ নেই বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে গমসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে হাওড়ের ধান কাটা নিয়ে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে, অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এর ফলে চালের দাম আরেকদফা বাড়তে পারে বলে অনেকে শঙ্কা করছেন। সরকারের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলছেন যে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রতিবেদন করা হচ্ছে যেন চালের দাম বৃদ্ধি পায়। যাই হোক না কেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যে সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি সরকারকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলতে পারে, জনগণের মধ্যে এ নিয়ে অস্বস্তি এবং অসন্তোষ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ছিনতাই, রাহাজানির ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে নানারকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হতে পারে। অনেকেই মনে করছে সামনের দিনগুলোতে যানজটসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানারকম দুর্ভাবনা বাড়তে পারে। এটিও জনগণকে সরকারের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করাবে বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলো সামনের দিনগুলোতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি সুশীল সমাজ নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম এখন সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে এবং সুশীল সমাজ সরকারের বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকার কি করবে?
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, ঈদের পর থেকে সরকার এসব ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিবে। কঠোর অবস্থান মানে শুধুমাত্র বিরোধীদলের প্রতি যে কঠোর তা না, সরকার ঘরে-বাইরে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ঈদের পর থেকে সরকার কতগুলো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রথমত, যারা ষড়যন্ত্র করছে সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ, সতর্ক এবং শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করবে। দ্বিতীয়ত, সরকারের ভিতরে যারা বিভিন্নভাবে স্যাবোটাজ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তৃতীয়ত, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে যারা সন্ত্রাস, নাশকতা এবং দেশবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এই সবকিছুর মাধ্যমে সরকার একটি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিবে এবং দেশ পরিচালনায় কঠোর অবস্থানের মধ্যদিয়ে আগামী নির্বাচনে যাবে দলটি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা বলছেন, সরকার যে দুর্বল নয় এটি সরকার প্রমাণ করবে। কারণ দুর্বল হলেই অন্যরা পেয়ে বসতে পারে।